Friday, November 29, 2013

0 এই প্রথম মিলল গৌতম বুদ্ধের অস্তিত্বের বৈজ্ঞানিক প্রমাণ!

বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান কোথায় জানেন কী? নেপালের লুম্বিনিতে। আর সেখানেই এক প্রাচীন মন্দিরের অভ্যন্তরে খননকার্য চালানোর সময়ে প্রত্নতাত্ত্বিকরা আবিষ্কার করে ফেলেছেন খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতকের আরেকটি অজানা কাঠামো। তাদের দাবি অনুযায়ী, এটা পৃথিবীর প্রাচীনতম বৌদ্ধ স্থাপনা। ইতোপূর্বে আবিষ্কৃত প্রাচীনতম বৌদ্ধমন্দির ছিলো সম্রাট অশোকের সময়কালের। তবে এখন জানা গেছে যে সেটা এই মন্দিরের অনেক পরে তৈরি হয়, মোটামুটি খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে- যখন সম্রাট অশোক আফগানিস্তান থেকে শুরু করে বাংলাদেশ পর্যন্ত বৌদ্ধধর্ম ছড়িয়ে দিচ্ছিলেন। এই আবিষ্কারের সাথে জড়িত গবেষকরা কাজ করছিলেন লুম্বিনির মায়া দেবী মন্দিরে। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটির আংশিক অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছিলো এদের কাজ। তবে সাম্প্রতিক এই আবিষ্কারের অর্থায়ন করছে মূলত জাপান সরকার এবং নেপাল সরকার যা রয়েছে ইউনেস্কোর এক প্রকল্পের অধীনে যার লক্ষ্য হলো লুম্বিনির সংরক্ষণের প্রচেষ্টা শক্তিশালী করা। ধ্যানরত ভিক্ষু, ভিক্ষুণী এবং দর্শনার্থীদের মাঝেই তাদের খননকার্য চালাতে হয়। Antiquity জার্নালে প্রকাশিত তাদের গবেষণার তথ্যে এসব প্রত্নতাত্বিকেরা বর্ণনা করেন কিভাবে লুম্বিনি থেকে শুরু হয়ে বৌদ্ধ ধর্ম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এই গবেষণার সাথে জড়িত ডারহ্যাম ইউনিভার্সিটির রবিন কানিংহ্যাম এর মতে, বুদ্ধের ব্যাপারে খুব কমই জানা গেছে এখন পর্যন্ত। এ কারনেই তারা প্রত্নতাত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এখানে অনুসন্ধান করার উৎসাহ পান। আর তা করতে গিয়েই মায়া দেবী মন্দিরে এই প্রাচীন কাঠামো খুঁজে পান তারা। বৌদ্ধ ধর্মানুসারে, রানী মহামায়া দেবী লুম্বিনি বাগানের একটি গাছের ডাল ধরে থাকা অবস্থায় বুদ্ধের জন্ম দেন। গৌতম বুদ্ধ বেড়ে ওঠেন বিলাস ও প্রাচুর্যের মাঝে, কিন্তু ২৯ বছর বয়সে গৃহত্যাগী হয়ে তিনি বোধি জ্ঞানের সন্ধান শুরু করেন। কনিংহ্যাম বলেন, বুদ্ধের জন্মের সময়টাই এমন যে তখন শাক্য জাতির মানুষের মাঝে সামাজিক অনেক পরিবর্তন আসা শুরু করছিলো। প্রাচীন এই লুম্বিনি কালের গ্রাসে হারিয়ে যায় নেপালের বন-জঙ্গলের মাঝে। ১৮৯৬ সালে এক খুঁজে পাওয়া যায় এবং বুদ্ধের জন্মস্থান বলে শনাক্ত করা হয়। সম্রাট অশোকের সময়কালের এক নিদর্শন থেকে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়। গবেষকদের মতে এই আবিষ্কার যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ কারণ পৃথিবীর প্রথম বৌদ্ধ স্থাপনা হতে পারে এটি। আর এটি তৈরি হয়েছিলো একটি গাছকে ঘিরে। গবেষকরা খননের সময়ে গাছের শেকড় এবং কাঠের কোনো কাঠামোর চিহ্ন খুঁজে পান একটি কিছু ইঁটের স্তুপের নিচে। কাঠের এই গঠনের মাঝে ছিলো একটি উন্মুক্ত জায়গা। এ থেকে গবেষকেরা ধারণা করছেন এটাই হতে পারে সেই স্থান যেখানে জন্ম হয় বুদ্ধের। বুদ্ধের অস্তিত্ব এবং অবস্থানের এই প্রথম কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পাওয়া গেলো। খননের ফলে প্রাপ্ত চারকোলের টুকরো এবং বালির কণা পরীক্ষা করে দেখা হয় রেডিওকার্বন এবং অপ্টিক্যালি স্টিমুলেটেড লুমিনেসেন্স পদ্ধতি ব্যবহার করে। এর ফলেই নির্ণয় করা যায় এগুলো সেই খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতকের। এই মন্দিরের মধ্যভাগে কোনও ছাদ ছিলো না। এ থেকেও ধারণা করে নেওয়া যায় এই স্থাপনার কেন্দ্রে একটি গাছ ছিলো। একটি প্রেস কনফারেন্সে কনিংহ্যাম বলেন, এটা এমন এক দুর্লভ মুহূর্ত যেখানে ধর্ম এবং বিজ্ঞান পাশাপাশি অবস্থান করছে। বৌদ্ধ ধর্মানুসারে, বুদ্ধের বোধি লাভ হয় একটি বৃক্ষের নিচে এবং গবেষকেরাও একটি বৃক্ষকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা স্থাপনা খুঁজে পেয়েছেন যা খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতকের মত প্রাচীন সময়ে তৈরি হয়। আরও বলা হয়, এর আগে ওই এলাকায়(নেপালে) বৃক্ষ কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা কোনও মন্দিরের খোঁজ পাওয়া যায় নি। সুতরাং সম্ভাবনা আছে যে এটাই হতে পারে সেই বৃক্ষ যার ডাল ধরে মহামায়া দেবী জন্ম দিয়েছিলেন গৌতম বুদ্ধকে। 
সৌজন্যেঃ অতীশ-দীপঙ্কর

Thursday, November 28, 2013

0 শ্রীলংকার বিশ্ববৌদ্ধ যাদুঘরে বাংলাদেশ (২)

 আজ সন্ধ্যায় আমরা দন্তধাতু বিহারের অধ্যক্ষ আসগিরিয় মহানায়ক থেরোর সাথে সাক্ষাৎ করি। তাকে বাংলাদেশ জাতীয় যাদুঘরের মহাপরিচালক মি. প্রকাশ চন্দ্র দাস যাদুঘরের শতবর্ষ স্মারক উপহার দেন। আমি তার সাথে কথা বলি এবং নিজেকে বৌদ্ধ বলে পরিচয় দেওয়ায় তিনি আনন্দিত হল। আমি ঢাকার ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহারে শ্রীলংকার দুই রাষ্ট্রপতি মি. জয়াবর্ধনে ও মি. প্রেমাদাসা এবং দুই প্রয়াত সংঘনায়ক কোসগোডা ধর্মবংশ ও ড. তালালে ধর্মানন্দ মহাথেরের শুভাগমনের কথা জানাই। সে সাথে শ্রীলংকার বৌদ্ধদের সথে বিহারের নৈকট্যের কথা জানাই। তিনি বলেন ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহার সম্পর্কে তিনি জানেন-তাকে বিহার পরিদর্শনের জন্য আমন্ত্রন জানাই। তিনি সূত্রপাঠের মাধ্যমে আমাদের আশীর্বাদ করেন। সে সময় তাপস ভিক্ষুও ছিল। সে সিংহলী ভাষায় আমাদের শ্রীলংকা আগমন সম্পর্কে বলেছে।

তারপর আমরা দু-একটি সুপার মার্কেটে গেলাম। আমি একটি সানগ্লাস কিনলাম। পরে KFC তে গিয়ে কিছু খেলাম। অর্থ্যাৎ রাতের খাবার শেষ করে নিলাম। তারপর দিন সকালে কাজ থাকায় ভিক্ষু তাপস রাত আটটার বাসযোগে কলম্বো ফিরে আসে। ক্যান্ডি আকর্ষনীয় শহর আবহাওয়া মনোরম। ভাল ভাল বিপনি আছে।

৬ই এপ্রিল প্রাতঃরাশের পর আমরা নিউরালির উদ্দেশ্যে যাত্রা করি। এটা একটি পর্যটন শহর। মনোরম হৃদের পারে এই শহর গড়ে উঠেছে। বহু আকর্ষনীয় হোটেল-রাতে থাকার সু-ব্যবস্থা আছে। রাস্তা থেকে হৃদ দেখা যায় কিন্তু প্রবেশ করতে হলে সম্মানী দিতে হয়। হৃদে স্পীডবোটে করে ভ্রমন করা যায়। দর্শনীয় বিনিময়ে খুবই আকর্ষনীয় স্থান। এখানে আসার পথে দুএকটি পাহাড়ী ঝরনা দেখলাম খুবই নান্দনিক। ঝরনার মধ্যে রামবাদা জলপ্রভাত খুবই আকর্ষনীয়-আমরা মূল সড়ক থেকে একটু নীচে নেমে সেটা উপভোগ করলাম। একে ঘিরে হোটেলও গড়ে উঠেছে। থাকা খাওয়ার দুয়েরই ব্যবস্থা অনুপম। ক্যান্ডি থেকে কিছুদূর আসার পর অন্য রাস্তা ধরেই আসতে হয়। সমস্ত পথ পার্বত্যময় চমৎকার। এই উঁচু পাহাড়ের পাশ দিয়ে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে এর উচ্চতা হবে এক হাজার ফিট। রাস্তা খুবই মজবুত। পথে পথে হাজারো চায়ের দোকান দেখলাম। রাস্তার ধারে কচি ডাব বিক্রি হচ্ছে-শাকসবজি। মি. শাকিল জানায় শ্রীলংকায় সবজির দাশ বেশী। সে তার বাসার জন্য সবজী কিনে নিল। রাস্তাটি সর্পিল। আমাদের সহযাত্রী কংকন আসা যাওয়ার পথে তিনচারবার বমি করল। আমারও এক সময় বমিবমি ভাব হয়েছিল। সে মনোরম স্থান পরিদর্শন করে আমরা ক্যান্ডি হয়ে কলম্বোর উদ্দেশ্যে যাত্রা করি। পথে ক্যান্ডি পেরিয়ে কলম্বো রোড এর একটি রেষ্টুরেন্ট এ দুপুরের খাওয়া সেরে নিলাম। কংকন বমির ভয়ে কোক ছাড়া কিছুই খেলনা। আমরা ভাত, ডাল, সবজী ও মমলেট খেলাম। রান্না ভালই ছিল। 
আজকের দিনটা আমাদের ফ্রি ডে। তাই এ ভ্রমনের ব্যবস্থা। বহুবার শ্রীলংকা এসেছি কিন্তু এবার হল নতুন অভিজ্ঞতা। অন্যসময় বৌদ্ধ তীর্থ ও ঐতিহ্য দেখেছি এবং নতুন নতুন শহর দেখেছি। চা বাগান, ঝরনা ও হৃদ দেখেছি। ক্যান্ডিতে পাহাড়শীর্ষে এক হোটেলে ছিলাম-সেখান থেকে সারা নগরী দেখা যায়। দৃষ্টি পড়লো দূরে পাহাড়শীর্ষে খোলা আকাশের নীচে নান্দনিক সমাধি বুদ্ধের আকর্ষনীয় মূর্তি। এই হোটেলে বিদেশী পর্যটক বেশী, বেকফাষ্ট খুবই উন্নত। আজ ৫.৩০ টায় আমরা কলম্বো পৌঁছলাম। আমাদের জন্য আর একটি অতিথিভবনে থাকার ব্যবস্থা করা ছিল। সেখানে লাগেজ নামিয়ে ফ্রেশ হয়ে কলম্বো শহর দেখতে বের হলাম। প্রথম এলাম লংকা জেম হাউসে। আমাদের দুই মহাপরিচালক মুক্তা ও মুক্তার চেইন দেখলেন। কিন্তু দাম বেশী। তারপর এলাম খঅকঝঅখ নামক বিপনীতে এখানে কভেনির পাওয়া যায়। আমাদের আড়ৎ এর মতই সেখানে অন্যান্যরা বাজার করল। আমি কয়েকটি চাবির রিং নিলাম। তারপর এলাম ঙউঊখণ নামক আকর্ষনীয় বিপনী বিতানে। আমি তো কিছুই নিলাম না। বাকীরা কিছু কিছু কেনাকাটা করলেন। কেনাকাটায় মিসেস শিরীন আখতার এগিয়ে ছিলেন। তবে বাজার হল খুবই সামান্য।

তারপর চলে এলাম মাননীয় হাইকমিশনারের বাসায়। বাসার সামনে ফটকে রয়েছে ব্রোঞ্জের শাপলা প্রতীক। ঘরে প্রবেশ করেই গেলাম জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি। পুলকিত হলাম। মাননীয় হাইকমিশনার আমাদের আন্তরিকভাবে স্বাগত জানান। যাদুঘরের মহাপরিচালক মি. প্রকাশ চন্দ্র দাস তাকে আমাদের শ্রীলংকা যাদুঘরের প্রতিনিধিদলের সাথে আলোচনার বিস্তারিত জানালেন এবং ঐ যাদুঘরের জন্য আমরা যে সমস্ত ছবি, মানচিত্র ও অন্যান্য জিনিস এনেছি তা তার হাতে তুলে দিলেন। আমরা মাননীয় হাইকমিশনার সাহেবকে অনুরোধ করি আমাদের সরকারকে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য। অনুরোধ করি যাতে যাদুঘরের বাংলাদেশ গ্যালারীকে আকর্ষনীয় ভাবে সাজানোর জন্য বেশী অর্থ বরাদ্দ করা হয়। তিনি আমাদের সাথে মতবিনিময় করেন এবং তার সুপারিশ গুলিও তুলে ধরেন। আমাদের আশা ২০১৩ সালের নভেম্বরের মধ্যেই বাংলাদেশ গ্যালারীকে পরিপূর্ণভাবে সাজানো সম্ভব হবে যদি অর্থ পাওয়া যায়।

মাননীয় হাইকমিশনার সাহেবের বাসায় ভিক্ষু তাপস এসেছিল। সে জানায় কলম্বোর সন্নিকটে একটি বৌদ্ধ বিহার প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছে। একে পূর্ণতা দেওয়ার জন্য শ্রীলংকা সরকারের কাছে জমি চেয়েছে। আমি আমাদের রাষ্ট্রদূত মহোদয়কে এ ব্যাপারে সহযোগীতার আবেদন জানাই। তিনি আশ্বাস দেন। আগেই লিখেছি বাংলাদেশ দুতাবাসের সাথে ভিক্ষু তাপসের মধুর সম্পর্ক বিরাজমান। তারা সকলেই তাকে জানে। তাপস ভিক্ষুর সাথে তার একজন সিংহলী দায়কও এসেছিল। তাকেও অনুরোধ করি তাপস ভিক্ষুকে সহায়তা দেওয়ার জন্য। আমরা দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সাথে আবার পরিচিত হই। পরিচিত হই তাদের স্ত্রী ও পুত্র কন্যাদের সাথে। একদম ঘরোয়া পরিবেশ, যেন এক খন্ড বাংলাদেশ। সেদিন মাননীয় হাই কমিশনার আমাদের রসের পরিবর্তে ডাবের জল দিয়ে আপ্যায়ন করেছিলেন। তিনি জানান তার বাসার চত্ত্বরে বহু নারিকেল গাছ আছে। বলা প্রয়োজন মি. শাকিল আমাকে চিনতে পেরেছিল আগে। সেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাথে আমার মত রাষ্ট্রীয় সফরে ভিয়েতনাম ও লাউসে গিয়েছিলেন। দূতাবাসের সকলেই আমাকে শিক্ষাবিদ এবং আমার সামাজিক মর্যাদা ছাড়াও আমি আওয়ামীলীগ উপদেষ্ঠা হওয়াতে বেশ সম্মান প্রদর্শন করেছিলেন। ডিনার ভালই হয়েছিল। মাছ, মাংস, সবজী, ডাল, ভর্তা সবই ছিল। খাওয়ার পর ফল এবং মিষ্টি ছিল। সবশেষে ছিল কফি। এভাবে একটি আনন্দঘন সন্ধ্যা মাননীয় হাইকমিশনার জনাব শফিউর রহমানের বাসভবনে অতিবাহিত করি। রাত ১১টায় অতিথি ভবনে ফিরে আসি।

৭ই এপ্রিল ভোর ৪টায় শয্যা ত্যাগ করি। আজ আমাদের দেশে ফেরার দিন। আমাদের ফ্লাইট হল সকাল ৭.৩০টায়। আমরা ৫ টায় বিমান বন্দরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করি এবং ৪০ মিনিটেই বিমান বন্দরে এসে যাই। দূতাবাসের কর্মী মি. খলিল আমাদের বিমান বন্দরে পৌঁছিয়ে দিয়েছিল এবং আমাদের সাথে বিমানের আরোহন গেইট পর্যন্ত ছিল। খলিলের ব্যবহারে মুগ্ধ হয়েছি। সে যেভাবে আমাদের প্রোটোকল দিয়েছিল তা বিশেষভাবে লক্ষ্যনীয়। আমরা দুপুর বারোটায় ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জান্তিক বিমান বন্দরে পেীঁছি। বিকাল তিনটায় আমি ধর্মরাজিক বৌদ্ধবিহারে পৌঁছে যাই।
হাইকমিশনের কর্মকর্তারা হলেন:
১। মোহাম্মদ সফিউর রহমান-মাননীয় হাইকমিশনার
২। জনাব বোরহানউদ্দিন-কাউন্সিলার
৩। কমোডোর এম নাসির-প্রতিরক্ষা উপদেষ্ঠা
৪। মি. শাকিল আহমদ-থার্ড সেক্রেটারী
৫। মি. জলিল-প্রটোকল বিভাগ।
বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের সদস্যদের নাম ঃ
১। মি. প্রকাশ চন্দ্র দাস, মহাপরিচালক, জাতীয় যাদুঘর-দলনেতা।
২। মিসেস শিরীন আখতার, মহাপরিচালক, প্রত্মতত্ত্ব বিভাগ।
৩। ড. প্রণব কুমার বড়ুয়া, মহাসচিব, বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘ।
৪। মি. কংকন বড়ুয়া, অফিসার, জাতীয় যাদুঘর।
পর্যটন শহর নিওরালি থেকে কলম্বো ফেরার পথে আমরা পথের ধারে গাড়ী থামিয়ে কচি ডাবের জল ও সাস খেলাম। বেশ সুস্বাদু। গাড়ী চলার সময় আমরা নিজেদের মধ্যে ভাববিনিময় করি। জাতীয় যাদুঘর ও প্রত্মতত্ত্ব বিভাগের মহাপরিচালকদ্বয় তাদের কর্মজীবন ও বিদেশ ভ্রমনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। দুজনেই দক্ষ, অভিজ্ঞ এবং সার্থক উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তা। আমাদের যে দম্পতি ডাবের জল কেটে দিয়েছিল তারা ইংরেজীতে আমাদের সাথে কথা বলল। শ্রীলংকায় কমবেশী সকলেই ইংরেজীতে কথা বলতে পারে। রাস্তাগুলি খুবই ভাল গাড়িতে হর্ণ বাজাতে হয় না। সকলে ট্রাফিক আইন মেনে চলে। ওভারটেইকিং কম বললেই চলে। আমাদের গাড়ীর চালক ছিল একজন সুদর্শন সিংহলী যুবক। সে মাঝে মাঝে বিভিন্ন স্থানের বর্ণনা দিয়েছিল। কলম্বো ক্যান্ডি মহাসড়কের মধ্যখানে প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শ্রীমাভো বন্দর নায়কের সমাধি আছে।
শ্রীলংকা বৌদ্ধ প্রধান দেশ। বৌদ্ধধর্ম ছাড়া ও এখানে হিন্দুধর্ম, ইসলামধর্ম, খৃষ্টধর্ম ও রয়েছে। চমৎকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিদ্যামান। ভারতের বুদ্ধগয়ার পবিত্র বোধিবৃক্ষটি ধ্বংসের সেখানে নতুনভাবে যে বৃক্ষটি জন্মেছিল তারই একটি পবিত্র শাখা শ্রীলংকার অনুরাধা পুরে আনা হয়-তা খুবই ঐতিহাসিক এবং শ্রীলংকার পবিত্র সম্পদ। পূর্বে আমি বহুবার অনুরাধাপুর ভ্রমন করেছি। ক্যান্ডিতে আছে মহামতি বুদ্ধের পবিত্র দন্তধাতু। এটা বছরে একবার হাতির পিঠে চড়িয়ে নগর পরিক্রমা করে ভক্তগণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য। অন্যসময় রাষ্ট্রীয় অতিথিদের দেখানো হয় বিশেষ ব্যবস্থায়। এই দন্তধাতু বিহারে প্রতিদিন সকালে পূজা হয়-বিকেলে উপসনা হয় এতে হাজারো নরনারী সমাগম হয়। এবার আমার দন্তধাতু দেখার সৌভাগ্য হয়নি তবু ধাতুমন্দির প্রদক্ষিণ করেছি এবং বাইর থেকে বন্দনা করেছি। যে হাতির পিঠে চড়িয়ে দন্তধাতু নগর পরিক্রমা করত-সে হাতি মারা যায়-একটি হাতির মূর্তি মন্দিরের সামনে তৈরি হয়েছে। দর্শনার্থীরা তাকেও শ্রদ্ধা করে। সে ষাট বছর এ কাজ করেছিল। প্রতি বছরের দন্তধাতু  প্রদর্শনীর সময়ে যে উৎসব হয় তার নাম ‘পেরেহারা’ উৎসব। সারা ক্যান্ডি সাজানো হয়-পথে পথে উৎসব। বিদেশীরাও তখন ক্যান্ডি আসে। ক্যান্ডির আকর্ষণ হলো একটি লেইক। পার্বত্যময় শহর। পাহাড়ের গায়ে গায়ে ভবন। শ্রীলংকায় ডাম্বুলায় গুহামন্দির আছে সিগিরিয়ায় পাহাড় গাত্রে মনোরম ফ্রেসক্ ো আছে। পোলরান্নভায় পাথরের আকর্ষনীয় বুদ্ধমূর্তি আছে। তথাগত বুদ্ধ শ্রীলংকা গিয়েছিলেন এবং কলম্বোর অদূরে কেলেনিয়া বৌদ্ধমহাবিহারে অবস্থান করেছিলেন। শ্রীলংকার মিহিনতল নামক স্থানে সিংহলীরাজা দেবানং প্রিয়তিসস সম্রাট অশোকপুত্র ভিক্ষু মহেন্দ্রের কাছে বৌদ্ধধর্ম গ্রহন করেন-উল্লেখ্য যে অশোক কন্যা সংঘামতী ভারত থেকে বোধিচারা শ্রীলংকায় নিয়ে আসেন। এছাড়া ভারতের উড়িষ্যা থেকে রাজন্যা অনিলা দন্তধাতুু শ্রীলংকায় এনেছিলেন। শ্রীলংকার এককালীন নাম সিংহল। বাংলার রাজপুত্র বিজয় সিংহ সিংহল জয় করেছিলেন-সেই দিনে যেই দিন গৌতম বুদ্ধ মহাপরিনির্বান লাভ করেন। শ্রীলংকায় পাহাড়শীর্ষে বুদ্ধের পদচিহ্ন আছে।
শ্রীলংকা বৌদ্ধ ধর্মদর্শন চর্চার অন্যতম প্রধান কেন্দ্র। এখানে বিশ্বখ্যাত বিদ্যালংকার ও বিদ্যোদয় বিশ্ববিদ্যালয় আছে। সিংহলের সিংহপুরুষ আগারিক ধর্মপাল ভারতের প্রাচীন বৌদ্ধঐতিহ্য আবিস্কার ও উদ্ধারে গৌরবময় ভূমিকা পালন করেন। কলম্বোতে ১৯৫০ সালে বিশ্ব বৌদ্ধ সৌভ্রাতৃত্ব সংঘ (WFB) প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘ তার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।
এই ভ্রমনে শ্রদ্ধেয় মি. প্রকাশচন্দ্র দাস মহাপরিচালক জাতীয় যাদুঘর বরাবরই আমার খোঁজখবর নিয়েছিলেন। প্রত্মতত্ত্ব বিভাগের শ্রদেয় মহাপরিচালক মিসেস শিরিন আখতার ও সহযোগিতার হস্ত প্রসারিত করেছিলেন। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। যাদুঘরের অফিসার কংকন বড়–য়া আমার ভাগিনা পরমআত্মীয়-সে আমার সুখ ও স্বাচ্ছন্দের জন্য সবসময় তৎপর ছিল। আমরা তিনদিনের যেন একই পরিবারের সদস্য হয়ে গিয়েছিলাম। আমাদের মনের, চিন্তার, ভাবের ও আদর্শের মিল ছিল বলেই আমরা সহজেই একে অপরের খুব কাছাকাছি এসেছি। একে অপরের দ্বারা উপকৃত হয়েছি। এই ভ্রমন আমার অক্ষয় স্মৃতি হয়ে থাকবে।
এই শ্রীলংকা সফর আমার জন্য অন্যরূপে অন্য অভিজ্ঞতায় এক অনন্য ও বৈশিষ্টমন্ডিত সুখস্মৃতির সমৃদ্ধ ভান্ডার।

 কৃতজ্ঞতাঃhttp://www.nirvanapeace.com

0 শ্রীলংকার বিশ্ববৌদ্ধ যাদুঘরে বাংলাদেশ (১)

আমি বহুবার শ্রীলংকায় গিয়েছি কিন্তু তার সাথে এবারের সফরের একটি পার্থক্য বিদ্যমান। অন্যান্যবার গিয়েছিলাম বৌদ্ধধর্মীয় সম্মেলন, বিশ্ববৌদ্ধ সম্মেলন, বিশ্ব বৌদ্ধ নেতৃসম্মেলন, তথ্যগত অনুসারী সম্মেলন, এশীয় ধর্ম ও শান্তি সম্মেলন ইত্যাদিতে যোগদানের জন্য। এবার গিয়েছিলাম পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে শ্রীলংকার ক্যান্ডিস্থ আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ যাদুঘর পরিদর্শনের জন্য বাংলাদেশের সরকারী প্রতিনিধিদলের সদস্য হয়ে। এই দলের নেতৃত্বে ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় যাদুঘরের মহাপরিচালক মি. প্রকাশ চন্দ্র দাস মহোদয়, অন্যান্য সদস্যরা হলেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মিসেস শিরীন আখতার। বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের মহাসচিব হিসেবে আমি ড. প্রণব বড়ুয়া এবং বাংলাদেশ জাতীয় যাদুঘরের অফিসার মি. কংকন কান্তি বড়–য়া। অন্যান্যবার শ্রীলংকায় যাই ভারতের মাদ্রাজ হয়ে এবং ব্যাংকক হয়ে, এবার কিন্তু সরাসরি ঢাকা থেকে বিমানে কলম্বো পৌঁছি। এভাবে সরাসরি আর যাওয়া হয়নি। এটা ছিল মিহিনলংকা বিমান-যাত্রার সময় ৩.১৫মি.। অতএব নতুন অভিজ্ঞতা, তার সাথে যুক্ত হলো সরকারী প্রতিনিধিদলের সদস্য হয়ে যাওয়া। মূলতঃ রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনই এ সফর। এ নতুন প্রাপ্তি।
আমরা ৪ঠা এপ্রিল ২০১৩ ইংরেজী তারিখে দুপুর ১২.১৫ মিঃ যাত্রা করি এবং স্থানীয় সময় ৩.১৫ মি. কলম্বো পৌঁছি। বিমান বন্দরে শ্রীলংকাস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তা মি. শাকিল আমাদের অর্ভ্যর্থনা জানায়। আমরা মালিডা আন্তর্জাতিক গেষ্ট হাউসে উঠলাম-এটা দূতাবাসের ব্যবস্থাপনা। এখানে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গবেষণা ও সেমিনারের জন্য যারা আসেন তারা থাকেন-নিরাপদ স্থান এবং পরিবেশ ভাল। পৌঁছার পর চেকিং ইন করে কক্ষে গেলাম-হাতমুখ পরিস্কার করে আধঘন্টার মধ্যেই আমরা বেরিয়ে পড়লাম কলম্বো শহর দেখার জন্য। প্রথমে এলাম স্বাধীনতা পার্কে। এটা খোলা আকাশের নীচে Independence park. নামে পরিচিত। এই পার্কে রয়েছেন মি. সেনানায়েকের বিশাল দন্ডায়মান মূর্তি। তিনি জাতির জনক। ১৯৪৮ সালে বৃটিশ সরকার তার কাছে স্বাধীনতার সনদপত্র যে স্থানে হস্তান্তর করে সেখানে একটি হল আছে। হলের সবদিক খোলা, নির্মাণ শৈলী অনুপম কারুকাজের স্তম্ভগুলি পাথরের। সেনানায়ক হলেন স্বাধীন শ্রীলংকার প্রথম প্রধানমন্ত্রী। বিশাল চত্বরে অনেক ভ্রমনপিপাসু এসেছেন। আমরাও চলে যাই সমুদ্র সৈকতে। শ্রীলংকাকে ভারত মহাসাগর স্পর্শ করেছে। সেখানে আমার পুরানো স্মৃতি মনে পড়ল। কেননা যে তাজসমুদ্র হোটেলে আমি ছিলাম তার সম্মুখেই তো সৈকত। এখানে আরও অনেক হোটেল আছে-সেখানেও থেকেছি। সৈকতে মহাসাগরের ঢেউ আছড়ে পড়ছে। ফুরফুরে বাতাস। বেশ ভাল লাগল, সকলেই উপভোগ করলাম। সৈকত জুড়ে খাওয়ার দোকান। বাচ্চারা ঘোড়ার পিটে চড়ে বেড়াচ্ছে।
সবশেষে এলাম দূতাবাসের কাউন্সিলর মি. বোরহান সাহেবের বাসায়। এখানে আমাদের ডিনার হবে। ঐ ডিনারের মাননীয় হাই কমিশনার মি. সাফিউর রহমান সাহেবও যোগদান করে। দূতাবাসের অন্যান্য কর্মকর্তারা ও যোগদান করে-তাদের স্ত্রীপুত্রসহ। সবাই যখন একত্রিত হলাম মনে হল বাংলাদেশেই আছি। মাননীয় হাইকমিশনারের সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ হল। বিশেষত: ক্যান্ডি যাদুঘরে বাংলাদেশ গ্যালারীর সাজসজ্জা নিয়ে, তাকে খুবই আন্তরিক দেখলাম। মূলতঃ তারই পরামর্শে এই সফর অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তিনি রংপুরের অধিবাসী অভিজ্ঞ কূটনৈতিক ব্যক্তিত্ব। আমি তার সাথে আলাপ করে খুবই আনন্দিত ও উপকৃত হয়েছি। এই ডিনারে বাংলাদেশের শ্রীলংকা নিবাসী শ্রীমৎ তাপস ভিক্ষুও যোগদান করে। সে আমার আমন্ত্রনে আমার সাথে দেখা করার জন্য আসে। কিন্তু ভাল লাগল এই দেখে যে, তাপস ভিক্ষু মাননীয় হাইকমিশনারসহ দূতাবাসের প্রত্যেকের সাথে অতি পরিচিত। তারাও তাকে আন্তরিকভাবে গ্রহণ করেছে। আমি বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের সাথে তাপস ভিক্ষুকে পরিচয় করিয়ে দিলাম। আমাদের সংগঠনের অন্যতম কর্মী হিসেবে। তাপস ভিক্ষু শুধু জুস খেল। ডিনারের পর অতিথি ভবনে ফিরে আসি। আগামীকাল সকাল ৭.৩০ টায় আমরা ক্যান্ডি যাবো। তাই ঘুমের প্রয়োজন। তদপুরি সারাদিনের ক্লান্তিও বিশ্রাম চাইছিল।
আজ ৫ই এপ্রিল Guest House এর ক্যাফেটেরিয়ায় প্রাত:রাশ খেয়ে আমরা কলম্বো থেকে ক্যান্ডির উদ্দেশ্যে যাত্রা করি। সাথে মি. শাকিল ও তাপস ভিক্ষু। ভাল ক্যাফেটিরিয়া, পরিচ্ছন্ন এবং খাদ্যও ভাল। রাস্তাভাল কিন্তু অনেকটা পাহাড়ী পথ বলে আমরা ৮টায় রওনা হলে ক্যান্ডি পৌঁছলাম সকাল ১১.৩০ টায়। আমাদের অভ্যর্থনা জানায় শ্রীলংকা প্রতিনিধিদলের নেতা প্রফেসর লীলানন্দ প্রেমাতিলক-সাথে ছিলেন অপর দুই সদস্য মি. গামিনী ভান্ডারা ও মি. লিওনেল উইজেসুন্দরা। দলনেতা প্রবীন ব্যক্তি এবং খুবই অভিজ্ঞ-তিনি কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পালিতে এম. এ করেছেন। ড. বেনীমাধব বড়–য়াকে চেনেন, ড. নীহার রঞ্জন রায় ও অতি পরিচিত। পরে বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি.এইচ. ডি করেছেন। আমি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি. এইচ. ডি করেছি জেনে তিনি আনন্দিত হলেন। প্রাথমিক আলাপের পর আমরা আন্তর্জাতিক বৌদ্ধধর্মীয় যাদুঘর দেখতে গেলাম। যাদুঘরে নীচের তলায় বাংলাদেশ গ্যালারী-শুরুতেই পেলাম ভারত, তারপর বাংলাদেশ, এরপর হচেছ নেপাল, ভুটান, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ভিয়েতনাম, লাওস, শ্রীলংকা, মায়ানমার, থাইল্যান্ড-উপরের তলায় আছে ইন্দোনেশিয়া, মালেয়েশিয়া, দঃ কোরিয়া, চীন ও জাপানের গ্যালারী।

ভারী দৃষ্টিনন্দন গ্যালারীগুলি স্ব দেশের বৌদ্ধ ঐতিহ্য ও সভ্যতার-পরিচয় তুলে ধরছে। বাংলাদেশ গ্যালারীটা বর্তমানে সাজানো হয়েছে। আমাদের পরিদর্শনের উদ্দেশ্য হল কি করে একে আরও আকর্ষনীয় ও মানসম্পন্ন করা যায়। গ্যালারীটা করিডোরে হওয়াতে আমার ভাল লাগেনি। আমাদের দলনেতা তার অসন্তুষ্ঠির কথা জানান। শ্রীলংকা কর্তৃপক্ষ বলেন প্রয়োজনে দেয়াল ভেঙ্গে বাংলাদেশের গ্যালারীর জন্য আরও জায়গা করে দেবে। পরিদর্শনের পর আমরা আনুষ্ঠানিক ভাবে বৈঠক করি এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিই। বাংলাদেশের প্রাচীন মূর্তিগুলির ছবির চাইতে রেপিকার উপর জোর দেওয়া হয়। একটি বাংলাদেশের মানচিত্র থাকবে এবং সেখানে বৌদ্ধঐতিহ্যভরা স্থানগুলিকে চিহ্নিত করে দেখান হবে। প্রবেশ পথে একটি বৌদ্ধ ঐতিহ্যবাহী তোরন থাকে। প্রবেশ করে দেখানো হবে বড় রেপিকায় পাহাড়পুর বৌদ্ধ মহাবিহারকে। প্রতিটি প্রদর্শনীতে তিনটি ভাষা থাকবে-সেগুলিতে বাংলা, সিংহলী ও ইংরেজীতে বর্ণনা থাকবে। বড় ভাস্কর্য থাকবে বজ্রপানি, ধ্যানীবুদ্ধ, অবলোকতিশ্বর এবং পালযুগের মূর্তিগুলির। কিছু কিছু চিত্রকর্ম ও থাকতে পারে। তাছাড়াও পাহাড়পুর ময়নামতি, রোহিতগিরি, পুন্ডবর্দ্দনের পরিচিতি থাকবে। আলাপের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধেয় প্রকাশ চন্দ্র দাস ও শ্রদ্ধেয়া শিরীন আখতারের মেধা মনন ও জ্ঞানের পরিচয় পেয়েছি-আমার বিশ্বাস তাদের মাধ্যমে বিদেশের মঞ্চে বাংলাদেশের ঐতিহ্য বেশ ভালভাবেই প্রতিপলিত হবে। যে জিনিসটার উপর জোর দেয়া হয়েছে সেটা হল বাংলাদেশের ভৌগলিক পরিচয়।
বাংলাদেশের বৌদ্ধধর্মের আগমন, অশোক যুগ, পুষ্যমিত্র, শশাংক ও গুপ্তযুগের বৌদ্ধধর্ম। বৌদ্ধধর্মেই পৃষ্ঠপোষকতা, হিউয়েসান ও ফাহিয়েনের সময়ের বৌদ্ধধর্ম। বিভিন্ন বৌদ্ধ রাজবংশ, পালরাজবংশ, বাংলাদেশে মহাযানী বৌদ্ধধর্ম তার উত্থান ও পরিণতি-দ্বাদশ শতকের পরের অন্ধকার যুগ ও আধুনিক যুগের বৌদ্ধধর্মের উপর একটি সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। এর বাইরেও বাংলাদেশ সরকার, জাতীয় যাদুঘর ও প্রত্মতত্ত্ব বিভাগ আরও আকর্ষনীয় বিষয় অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে। আলোচনা খুবই সফল হয়েছে এবং আমি মনে করি এ ধরনের মতবিনিময় সভা বড়ই প্রয়োজন ছিল। এজন্য শ্রীলংকায় নিযুক্ত বর্তমান মাননীয় হাইকমিশনারের উদ্যোগ প্রশংশনীয় এবং তাতে সাড়া দেয়ার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অভিনন্দন জানাচ্ছি।

কৃতজ্ঞতাঃhttp://www.nirvanapeace.com
  

0 চট্টলার ঐতিহাসিক বৌদ্ধতীর্থ চক্রশালা মন্দির

যুগে যুগে বঙ্গ বা বাঙালি শব্দকে ঘিরে সুজলা-সুফলা অস্তিত্বকে কবি, সাহিত্যিক ও ঐতিহাসিকরা ভাবের ব্যঞ্জনায় প্রকাশিত করে আসছেন। ইবনে বতুতা, আলবেরুণী, টলেমী ও চৈনিক পর্যটকগণ বাংলার ঐশ্বর্য ও সৌন্দর্যে মুগ্ধ না হয়ে পারেননি। কিন্তু সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এক সময় আক্ষেপ করে বলেছিলেন “বাঙালির ইতিহাস নাই”। সত্যিকার অর্থেই আমরা বাঙালিরা ইতিহাস জিজ্ঞাসু নই। আর তাই কালের করাল গ্রাসে এই নশ্বর পৃথিবীর সবকিছুই অবক্ষয়ের পথে এগিয়ে যায়। আমরা যদি একটু সচেতন হই তাহলে আমাদের চারপাশের পুরনো ঐতিহ্যমণ্ডিত স্থান বা প্রতিষ্ঠানসমূহের ইতিহাস সংগ্রহ করে আমরা নিজেদের সভ্যতার ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করতে পারি যা যুগে যুগে প্রেরণার উপকরণ হিসেবে সৃজনশীল কাজে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে পারে। আমরা একটু দৃষ্টি দিই আদি বৌদ্ধতীর্থ চক্রশালার দিকে।
দক্ষিণ চট্টগ্রামের অগ্রসরমান জনপদ পটিয়া। পটিয়া সদর থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার পূর্বে এর অবস্থান। বৌদ্ধযুগে চট্টগ্রামের আদি নাম ছিল চট্টলা। তবে এটি চক্রশালা নামেই বহির্জগতে সমধিক পরিচিত ছিল এবং এখনো বিদ্যমান। বর্তমানে এই চক্রশালা গ্রামটি এর ক্ষীণ স্মৃতি বহন করে বৈকি। পূর্বে এ স্থানে শুধু একটি মন্দির ছাড়া আর কিছুই ছিল না। সেই মন্দিরের গায়ে মার্বেল পাথরে খোদাই করে লেখা আছে, “ফরাতারা স্তুপ নবতর পর্যায়ে সংস্কার ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দ চক্রশালা বৌদ্ধতীর্থ সংরক্ষণ কমিটি হাইদগাঁও, পটিয়া, চট্টগ্রাম।” পর্যায়ক্রমে এ স্থানে নির্মাণ করা হয়েছে একটি সুদৃশ্য তোরণ ও সীমানা প্রাচীর। এছাড়া এ মন্দিরের পূর্বদিকে রয়েছে একটি পাকাঘাটসমেত পুকুর ও টিউবওয়েল। বলাবাহুল্য এ মন্দিরের আশেপাশে এমনকি হাইদগাঁও ও চক্রশালা গ্রামের কোথাও বৌদ্ধ পরিবারের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু জনশ্র“তি আছে এখানে একসময় বৌদ্ধদের বাস ছিল যা কালক্রমে বিলুপ্ত হয়ে যায়।
এই চক্রশালা নামের উৎপত্তি নিয়ে নানা মহলের কাছ থেকে নানা ধরনের তথ্য পাওয়া যায়। শোনা যায় এ স্থানে তথাগত গৌতম বুদ্ধ সুদূর রেঙ্গুন (মিয়ানমার) থেকে আসার পথে অবকাশ যাপন করেন এবং তিনি চংক্রমন করেছিলেন বলেই এই স্থানটিকে চক্রশালা নামে অভিহিত করা হয়। কেউ কেউ বলেন চক্রশালায় বুদ্ধের বত্রিশ লক্ষণ ও অশীতি অনুরঞ্জন অঙ্কিত বুদ্ধচক্র নামক পাথর, নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান আচার্য শীলভদ্র মহাস্থবিরের শিষ্য দীপঙ্কর স্থবির কর্তৃক এ মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সেজন্য একে চক্রশালা বলা হয়। উল্লেখ্য, তিব্বতের তাঞ্জুর গ্রন্থেও চক্রশালার ইতিবৃত্ত লিপিবদ্ধ আছে জানা যায়। তবে ভদন্ত ধর্মতিলক ও বীরেন্দ্র মুৎসুদ্দী কর্তৃক অনুবাদিত সদ্ধর্ম রত্নাকর গ্রন্থে যা লিপিবদ্ধ আছে সে তথ্যগুলোকেই সর্বাপেক্ষা শ্রেয় বলে বিবেচনা করা হয়। তা এ রকমÑ চট্টল বৌদ্ধগণের পৌরাণিক ইতিবৃত্ত ধারাবাহিকভাবে লিপিবদ্ধ না থাকলেও শ্র“তি পরম্পরা ইতিবৃত্ত সম্বন্ধে অভিজ্ঞ প্রাচীনদের মতে চট্টল বৌদ্ধদের আদি পুরুষ মগধ হতে এসেছে। ছান্ধমা নামে এক ব্যক্তি মগধ দেশ হতে এসে প্রথমে আকিয়াবের ছান্ধমা পাহাড়ে উপনিবেশ স্থাপন করেন। তাঁর নামানুসারে সেই পাহাড়ের নাম ছান্ধমা নামে আজো পরিচিত। তিনি সেই পাহাড়ের শীর্ষে এক মনোরম ধাতুচৈত্য নির্মাণ করেন। প্রবাদ আছে সেই ধাতুচৈত্য হতে সময়ে সময়ে জ্যোতি নির্গত হয়। ঐ আদিপুরুষ ছান্ধমার চেন্দি ও রাজমঙ্গল নামে দুই পুত্র ছিল। চেন্দি ছিলেন গৃহী আর রাজমঙ্গল ভিক্ষুধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। গৃহী চেন্দীর ঔরসে কেজগ্রি, কেয়ক্চু ও বৃন্দাবন নামে তিনটি সন্তানের জন্ম হয়। তাদের বাসস্থান ছিল কক্সবাজারের চকরিয়া গ্রামে। তাদের মধ্যে কেয়ক্চু মগধবাসী দীপঙ্কর মহাস্থবিরের শিষ্য সরভূ মহাস্থবিরের নিকট ভিক্ষুত্ব গ্রহণ করেছিলেন। তখন তাঁর নামকরণ হয়েছিল চন্দ্রজ্যোতিঃ।
এরপর তিনি দেশপরিভ্রমণ ও শিক্ষালাভের মানসে ব্রহ্মদেশের মৌল মেইনে গমন করেন। সেখানে বিশ বছর যাবত ধর্ম, বিনয় অধ্যয়ন করে দেশে ফেরার সময় সেদেশের দশজন ভিক্ষুসহ একটি চক্রাসন, তিনটি বুদ্ধমূর্তি ও কয়েক খণ্ড বুদ্ধাস্থি এনেছিলেন। উল্লেখ্য, সেই বুদ্ধমূর্তিগুলো আনয়নের সুবিধার জন্য তিন টুকরা অবস্থায় আনা হয়েছিল বলে ত্রিভঙ্গ মূর্তি নামে কথিত রয়েছে। মূর্তিগুলোর শিরোপরি বুদ্ধের শারীরিক অস্থিধাতু স্থাপিত ছিল। তাঁরা আগরতলার লালমাই পাহাড়ে বিহার স্থাপন করেন। আগরতলা রাজবংশীয় বলিভীম আদিত্য নামক জনৈক শ্রদ্ধাশীল ব্যক্তি তাঁদের জন্য বিহার নির্মাণ করে সেখানে চৌদ্দ হাত লম্বা পরিনির্বাণ মূর্তি ও বিনয়ানুকুল ভিক্ষুসীমা নির্মাণ করেছিলেন। সেই সীমায় ক্রমে ১০০ জনকে ভিক্ষুধর্মে দীক্ষা দেওয়া হয়েছিল। সেখানে পাঁচ বৎসরকাল শিষ্যদেরকে ধর্মবিনয় শিক্ষা দিয়ে চট্টগ্রাম অভিমুখে ফিরছিলেন, ফেরার পথে সীতাকুন্ড পাহাড়ের উচ্চতম শিখরে একটি বিহার স্থাপন করেন। সেখানে পূর্বোক্ত ত্রিভঙ্গ বুদ্ধমূর্তি স্থাপনপূর্বক একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। সেই থেকে সীতাকুন্ড পাহাড় ভিক্ষু চন্দ্রজ্যোতিঃ বিহারের নামানুসারে চন্দ্রশেখর নামে পরিচিত হয়ে আসছে।
এরপর তিনি শিষ্যগণসহ পটিয়ার পর্বত নির্ঝরণী শ্রীমতির তীরে হাইডমজা নামক ধনাঢ্য ব্যক্তির আম্রকাননে উপস্থিত হন। হাইডমজা খবর পেয়ে প্রতিবেশীসহ চন্দ্রজ্যোতি স্থবিরকে দেখতে যান। তিনি স্থবিরের পাণ্ডিত্যপূর্ণ আলাপে সন্তুষ্ট হয়ে তাঁকে আপন বিহারে নিয়ে যান এবং তিন দিনব্যাপী ধর্মসভার আয়োজন করেন। হাইডমজা কথা প্রসঙ্গে জানতে পারলেন যে, এই স্থবির কক্সবাজারের চকরিয়া নিবাসী চেন্দির পুত্র। অতঃপর তিনি এ সংবাদ নিয়ে চকরিয়াতে লোক পাঠালেন। চেন্দি নিরুদ্দেশ পুত্রের খবর পেয়ে খুবই পুলকিত হলেন এবং অনেক লোকজন সমভিব্যহারে গিয়ে পুত্রকে স্বদেশে ফিরিয়ে আনেন।
চকরিয়াতে রওয়ানা হবার সময় হাইডমজা চন্দ্রজ্যোতি স্থবিরের নিকট চক্রাসনটি প্রার্থনা করেন। স্থবিরও তা তাকে সানন্দে প্রদান করেন। এই চক্রাসন স্থাপনের জন্য হাইডমজার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় নিজ গ্রামের কেন্দ্রে যে মন্দির নির্মিত হয়েছিল, তা-ই চক্রশালা মন্দির। চক্রাসন স্থাপনের জন্য এই এলাকাটি “চক্রশালা” নামে পরিচিত হয়ে আসছে। এরপর স্থবির পুনরায় তার পিতাসহ এই এলাকায় চক্রাসনের মন্দির বন্দনার মানসে উপস্থিত হন। সেখানে বন্দনা, পূজা করে বিষুব সংক্রান্তিতে মেলার আয়োজন করেন। সেই থেকেই প্রতি বছর এই স্থানে চৈত্র মাসের শেষদিন অর্থাৎ বিষুব সংক্রান্তিতে মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
কালের বিবর্তনে চক্রশালা আদি বৌদ্ধ তীর্থ মন্দিরটি প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত হলে পরলোকগত সংঘরাজ পূর্ণাচার ধর্মাধার চন্দ্রমোহন মহাস্থবির ও প্রতœতত্ত্ব বিশারদ জগতচন্দ্র মহাস্থবিরের প্রয়াসে পুনঃনির্মিত হয়। দ্বিতীয়বারে পটিয়ার বাক্খালী গ্রামের প্রয়াত নবীন চন্দ্র বড়–য়ার উদ্যোগে সাধারণের অর্থানুকুল্যে মন্দিরটি সংস্কার করা হয় এবং সাতবাড়িয়ার প্রয়াত অধীন চন্দ্র চৌধুরী মন্দিরের সম্মুখস্থ পুকুরের পক্ষোদ্ধার করেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে পটিয়ার মধ্যম জোয়ারা গ্রামের প্রয়াত মনোরঞ্জন বড়ুয়া নিজ ব্যয়ে পুকুরের ঘাট নির্মাণ ও টিউবওয়েল স্থাপন করেন।
বিষুব সংক্রান্তির মেলায় এই মন্দিরের প্রাঙ্গণ জুড়ে হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ বৌদ্ধ জনসাধারণের সমাগম ঘটে। কিন্তু দুঃখের বিষয়Ñ এ স্থানে যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। পটিয়া সদর থেকে কিছুদূর রাস্তা কার্পেটিং করা থাকলেও বাকী মাত্র ১ কিলোমিটার রাস্তা সম্পূর্ণ কাঁচা ও অত্যন্ত সরু অবস্থায় রয়েছে। এলাকাবাসী তথা ধর্মপ্রাণ বৌদ্ধ জনসাধারণের দাবী এ সড়কের দ্রুত সংস্কার। আমাদের প্রত্যেকের নৈতিক দায়িত্ব এরকম ঐতিহ্যমণ্ডিত স্থানের গুরুত্ব অক্ষুন্ন রাখতে উদ্যোগী হওয়া। এজন্য প্রয়োজনীয় প্রকল্পসমেত উদ্যোগ গ্রহণে সরকারী অনুদান ও জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসা একান্ত অপরিহার্য। না হয় প্রাচীন বৌদ্ধসভ্যতার নিদর্শন এই অতীত গৌরব বিস্মৃতির অতলগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।

0 প্রথমবারের মতো ইসরায়েলে বৌদ্ধ বিহার স্থাপন

বৌদ্ধ ধর্মের বিজয় কেতন উড়ছে এখন মধ্যপ্রাচ্যে মধ্যপ্রাচ্যের ইসরায়েলে। ইসরায়েল এ শ্রীলংকার নাগরিকেরা তাঁদের ধর্ম পালনের জন্য প্রথমবারের মতো একটি বৌদ্ধ বিহার নির্মাণ করতে যাচ্ছে। এটি রাজধানী তেল আবিব এর একটি সুউচ্চ এপার্টমেন্টে। ইসরায়েলের ধর্মীয় সহনশীলতা রক্ষার স্বার্থে প্রচার ছাড়া সীমিত আকারে উদ্ধোধনের মাধ্যমে এই বিহারের যাত্রা শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন বিহারাধ্যক্ষ কে ধাম্মাতিলকা থের । স্থায়ী জায়গায় বিহার নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত এখানেই ধর্মীয় কার্যক্রম চলতে থাকবে। এই বিহার স্থাপনের জন্য ইসরায়েলের শ্রীলংকার রাষ্ট্রদূত শরত বিজয়সিংহ সরকারের পক্ষ হতে সহযোগিতা প্রদান করেন।


কৃতজ্ঞতাঃhttp://www.nirvanapeace.com

0 নেপালের লুম্বিনীতে প্রাচীনতম বৌদ্ধ মন্দিরের সন্ধান লাভ....

নেপালের লুম্বিনি এলাকায় গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থানে মাটি খুঁড়ে প্রাচীনতম বৌদ্ধ মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের সন্ধান পেয়েছেন প্রত্নতত্ত্ববিদেরা। কাঠের অবকাঠামোটি খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে মায়াদেবী মন্দিরের সঙ্গে মাটিতে চাপা পড়েছিল।

বুদ্ধের জন্ম স্থান বলে খ্যাত নেপালের লুম্বিনীস্থ মায়াদেবী বিহারের অভ্যন্তরে টানা তিন দিন খনন কাজ শেষে মহামানব বুদ্ধের প্রকৃত জন্মস্থানের সন্ধান লাভ করে একটি ‘বৃক্ষ শাখা ধরা অবস্থায়’ ২৬০০ বৎসর পূর্বে বুদ্ধের জন্মলাভের সত্যতা স্বীকার করছেন প্রত্নতত্ববিদরা। এর মধ্য দিয়ে বুদ্ধের জন্মতারিখ নিয়ে বিতর্কের অবসান হতে পারে।ডুরহাম ইউনিভার্সিটির প্রত্নতত্ববিদ রবিন কানিংহাম এর মতে, কিছু পুঁথি ও মুখে মুখে প্রচারিত তথ্যসূত্র ছাড়া খুব কম মানুষই বুদ্ধের জীবনী সম্পর্কে জানে। আমরা ভাবলাম, প্রত্নতত্ব কেন বুদ্ধের জন্ম সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য চেষ্টা করছে না ? এটিই প্রথম, আমাদের কাছে লুম্বিনীর একটি প্রত্নতাত্বিক ক্রমধারা আছে যাতে ৬শ খ্রিস্টপূর্ব বছরের স্থাপনা দেখানো যায়’।

উল্লেখ্য, যখন প্রত্নতত্ববিদরা খনন করল, তাঁরা একটি ঘেরা সমৃদ্ধ সুবিন্যাস্ত নিদৃষ্ট স্থান দেখতে পেল, এবং ঐ ঘেরার মধ্যেই তাঁরা বৃক্ষ মূলটি পায়।যা ছিল বৌদ্ধ স্তুপের ঐতিহ্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ঃ একটি জীবন্ত গাছ যা কাঠের পাটাতন দিয়ে ঘেরা ছিল।ওই মন্দিরের ভেতরে একটি গাছ ছিল বলে মনে হয়েছে। বুদ্ধের জন্ম নিয়ে যে কাহিনি প্রচলিত আছে, তার সঙ্গে এর সম্পর্ক রয়েছে। বুদ্ধের মা যখন বুদ্ধকে জন্ম দেন, তখন তিনি একটি গাছের ডাল ধরে রেখেছিলেন।লুম্বিনি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান। তিনিই পরে বুদ্ধ হন। প্রতিবছর হাজার হাজার বৌদ্ধ তীর্থযাত্রী লুম্বিনিতে যান।

এখন পর্যন্ত লুম্বিনিতে সবচেয়ে পুরোনো যে বৌদ্ধ অবকাঠামো পাওয়া গেছে, তা খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতকের আগের নয়। সময়টা ছিল সম্রাট অশোকের শাসনামল। আন্তর্জাতিক একটি প্রত্নতাত্ত্বিক দল লুম্বিনিতে মন্দিরের একেবারে কেন্দ্রস্থলে খননকাজ চালায়। দলটির সহপ্রধান যুক্তরাজ্যের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রবিন কানিংহাম বলেন, ‘এই প্রথম আমরা লুম্বিনিতে এমন একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পেয়েছি, যেখানে খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকের একটি অবকাঠামো রয়েছে। বিশ্বে বুদ্ধের এটাই সবচেয়ে প্রাচীন নিদর্শন।’ বিবিসি।

ইংল্যান্ডের ডুরহাম ইউনিভার্সিটির প্রত্নতত্ববিদ রবিন কানিংহাম এর সাথে এই খনন কাজে সম্পৃক্ত ছিল নেপালের পশুপতি এরিয়া ডেভেলপমেন্ট ট্রাস্ট এর কোশ প্রসাদ আচার্য। এছাড়া ন্যাশনাল জিওগ্রাফী চ্যানেল এর একটি দল সার্বক্ষণিক এখানে চিত্র ধারণ করেছে যা আগামী ফেব্রুয়ারী মাসে প্রচার করা হবে।
সৌজন্যেঃ প্রথম আলো

Wednesday, November 27, 2013

0 অভিধম্মপিটক :.......


এই পিটকে বৌদ্ধধর্মের দার্শনিক বিচার ও আধ্যাত্মবাদের আলোচনা রয়েছে। এর অন্তর্গত গ্রন্থসংখ্যা সাতটি- ১.ধম্মসঙ্গনি, ২.বিভঙ্গ, ৩.ধাতুকথা, ৪.পুলপঞ্জতি, ৫.কথাবত্থু, ৬.যমক, ৭.পট্ঠান।
এই সাতটির মধ্যে প্রসিদ্ধ কথাবত্থুর মহত্তপূর্ণ রচনা অশোকের গুরু মোগ্গলিপুত্ত করেছেন। আত্মা কী, তার কোন পৃথক সত্তা আছে কিনা, নির্বাণের স্বরূপ কী, গৃহপতিও কি অর্হৎপদ প্রাপ্ত হতে পারে- এসকল বিষয় কথাবত্থুতে আলোচিত হয়েছে।
.
পালি ভাষায় রচিত এই ত্রিপিটক গ্রন্থগুলি বুদ্ধের মুখনিঃসৃত বচনরূপে সঙ্কলিত হলেও বুদ্ধের জীবদ্দশায় লিখিত হয় নি। বুদ্ধের অনুসারীদের মুখে মুখে তা সংরক্ষিত হয়ে বুদ্ধের পরিনির্বাণের বহুকাল পরে লিখিত আকারে সঙ্কলিত হয়েছে। তবে ত্রিপিটকের অনেকগুলো ভাগ বুদ্ধের নির্বাণের এক শতাব্দি পর বৌদ্ধধর্মের দ্বিতীয় ধর্মসঙ্গীতিকালে সঙ্কলিত হয়েছে বলে জানা যায়। আর ত্রিপিটকের কথাবত্থু প্রভৃতি অংশের রচনা অশোকের সময়ে (২৬৯-২৩২ খ্রীষ্টপূর্ব) হয়েছে।
এছাড়া বৌদ্ধসাহিত্যে ত্রিপিটক বহির্ভূত কিছু প্রসিদ্ধ পালিগ্রন্থ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো খ্রীষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকে উত্তর-পশ্চিম ভারতে রচিত ‘মিলিন্দ পনহো’। বৌদ্ধ দার্শনিক নাগসেনের (১৫০খ্রীষ্টপূর্ব) সাথে শিয়ালকোটের গ্রিক রাজা ও দার্শনিক মিনান্দরের (মিলিন্দ) দার্শনিক বিতর্কের আকর্ষণীয় বর্ণনা অন্তর্ক্তুক্ত রয়েছে। চতুর্থ খ্রীস্টাব্দে মগধনিবাসী বুদ্ধঘোষ রচিত পালিভাষায় ত্রিপিটকের ভাষ্য বা ব্যাখ্যারূপে ‘অট্ঠকথা’। তিনি পববর্তীকালে সিংহলদেশে (শ্রীলঙ্কা) গিয়ে এটি রচনা করেন, কিন্তু ত্রিপিটকভাষ্য শেষ করে যেতে পারেন নি। অবশিষ্ট কাজ সম্পূর্ণ করেন বুদ্ধদত্ত, ধম্মপাল, মহানাম, নবমোগ্গলান ও চুল্লঘোষ নামক আচার্যগণ। তবে বুদ্ধঘোষের সবচেয়ে মহত্ত্বপূর্ণ রচনা হচ্ছে ‘বিসুদ্দমগ্গ’ (বিশুদ্ধমার্গ), যা বৌদ্ধদর্শনের অত্যন্ত প্রামাণিক সিদ্ধান্তগ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত হয়।

0 বৌদ্ধধর্মের প্রভাব ও পরিণতি

‘বুদ্ধং সরণং গচ্ছামি, ধম্মং সরণং গচ্ছামি, সংঘং সরণং গচ্ছামি’ - এই মন্ত্রই বৌদ্ধধর্মের মূলমন্ত্র। কোটি কোটি মানুষ এই মন্ত্রোচ্চারণ করে বৌদ্ধধর্মে দীক্ষিত হন। ভগবান বুদ্ধ নির্দেশিত শীলাচারণ, মঙ্গলপ্রার্থনা তথা তাঁর সমগ্র জীবনই এই ধর্মে দীক্ষিত হলে যে প্রভাবিত করে তাতে কোন সন্দেহ নেই। আপন মুক্তি বুদ্ধের প্রার্থনা ছিল না -বৃহত্তর জগতের স্বার্থে আপামর জনসাধারণের মুক্তির উপায় খুঁজতে এই করুণাঘন মহামানবের আবির্ভাব। তাঁর ব্যক্তিগত সংযম, সৌন্দর্র্য। গাম্ভীর্যপূর্ণ সুভাষণ অচিরেই জয় করে নিয়েছিল সহস্র শরণাগতের হৃদয়।
ঈশ্বর ও পরকালে বিশ্বাস মানবধর্মের ভিত্তি কিন্তু তা সত্তেও অনাত্মবাদী নিরীশ্বর বৌদ্ধধর্মের দেশে- বিদেশে প্রসার ঘটেছে। তাঁর ধর্মচক্রপ্রবর্তন-সূত্র থেকেই এই নিরীশ্বরবাদের পরিচয় মেলে। ধর্মচক্র-প্রবর্তন বুদ্ধের প্রথম উপদেশ যাতে ঈশ্বর বিষয়ক কোন প্রসঙ্গ আলোচিত হয় নি, যা হয়েছে তা হলো দুঃখতত্ত্ব। দুঃখ কি? দুঃখের উৎপত্তি কোথায়? দুঃখের নিবৃত্তি কিসে হয় এবং দুঃখ নির্বত্তির উপায় যা ‘আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গ’ নামে পরিচিত। এই প্রদর্শিত পথাবলম্বনেই ধর্মের চরম লক্ষ্য নির্বাণ বা মুক্তি সম্ভব। বৌদ্ধধর্মের সারকথা হলো যে প্রত্যেক মানুষ নিজ কর্মগুণে, নিজ পুণ্যবলে, স্বার্থবিসর্জন, সদাচার, প্রেম, মৈত্রী, করুণার দ্বারা নির্বাণরূপ মুক্তিলাভের অধিকারী হয়। বিবেচনা করে বলা যায় বৌদ্ধধর্ম কোন ঈশ্বরবাদ নয় - এটি নীতিমূলক বা নীতিপ্রধান ধর্ম। যে নীতে বা নিয়ম তিনি সঙ্ঘের জন্য নির্দিষ্ট করেছিলেন তার অনেকাংশই সাধারণ মানুষেরও আত্মার শুদ্ধিকরণে যে যথেষ্ট সহায়ক তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাছাড়াও ভগবান তার এই নীতি ধর্ম গল্পের মাধ্যমে যে সুন্দরভাবে প্রচার করতেন তাও বিশেষ উল্লেখযোগ্য। সহজ প্রাঞ্জর ভাষা, সময়োপযোগী প্রসঙ্গ, যুক্তিসহকারে যেভাবে তিনি পরিবেশন করতেন যা সুবোধ্য প্রাণস্পর্শী হয়ে উঠতো সহজেই। আগ্রহ পূর্বক তা শ্রবণ করে মানুষ ক্রমেই এই ধর্মের দ্বারা প্রভাবিত হতে থাকে। এছাড়াও ভগবানের অকৃত্রিম সরলতা, গাম্ভীর্য ও মনোমুগ্ধকারী মোহিনীশক্তি, আকর্ষণী ক্ষমতা তাঁর ধর্মের প্রচার ও প্রসার ঘটায় খুব অল্প সময়ের মধ্যে।

বৌদ্ধধর্ম জনপ্রিয়তা পাওয়ার আর একটি প্রধান কারণ হলো- শাক্যমুনি যখন আবির্ভূত হন তখন ব্রাক্ষণ্য ধর্মের বৈদিক পূজার্চনা, যাগযজ্ঞের জটিল ধর্মীয় ক্রিয়াকলাপ ও বাহ্যিক আড়ম্বর এবং ব্রাক্ষণদের আদিপত্য ও জাত্যাভিমান মানুষের মধ্যে ব্রাক্ষাণ্যধর্মের প্রতি যেমন বিরূপ মনোভাব সৃষ্টি করে তেমনই বৌদ্ধধর্মের সরলতা, অহিংসা, ক্ষমার আদর্শ এবং জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে আপামর জনসাধারণের প্রতি সাদর আমন্ত্রণের ডাক মানুষকে বৌদ্ধধর্মের প্রতি নিবিড়ভাবে আকৃষ্ট করে তোলে। সর্বোপরি তাঁর (ভগবান বুদ্ধ) জীবনরহস্য ও হৃদয়স্পর্শী অসাধারণ আকর্ষণ শক্তি বা ক্ষমতার কথা তো বলার অপেক্ষা রাখে না
বৌদ্ধসংগীতিগুলি বৌদ্ধধর্মের ইতিহাসে এক একটি অধ্যায় বিশেষ। আনুমানিক ৪৮৩ খ্রীঃ পূ. ভগবান নির্বাণলাভ করার কয়েক মাসের মধ্যেই বৌদ্ধ ভিক্ষুদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয়। কোন্ ধর্ম-বিনয়গুলি গৃহীত, পালিত বা অনুসৃত হবে বা কোন্গুলি হবে না এই প্রসঙ্গ দেখা দিলে বুদ্ধবাণী সংগ্রহের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। ক্রমে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ বৌদ্ধসংগীতি যথাক্রমে আজাতশত্র“, কালাশোক, অশোক ও সম্রাট কণিষ্কের রাজত্বকালে অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম সংগীতিতে ধর্ম ও বিনয় আলোচিত হয় এবং সংস্থাপিত হয়। এই অধিবেশনে ত্রিপিটকের অন্যশাখা অভিধর্মের অস্থিত্ব মেলে না। বৌদ্ধসংঘে দশবস্তু (দসবত্থু) নিয়ে যে বিরোধ উপস্থিত হয়েছিল তা মীমাংসা করার জন্য দ্বিতীয় বৌদ্ধসংগীতি অনুষ্ঠিত হয় এবং এই সংগীতি বৌদ্ধর্মের আরও প্রসার ঘটায় এবং বিভিন্ন শাখা-উপশাখা উদ্ভবের ফলে বৌদ্ধসংঘ বি¯তৃতিলাভ করে। তবে কথিত আছে লব্ধ সুযোগ সুবিধা বৌদ্ধ ভিক্ষুদেও সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য মতাবলম্বীদেরও সংঘে প্রবেশ করতে আগ্রহ সঞ্চার করে এবং বৌদ্ধ বিহারগুলিতে বিভিন্ন মত প্রচারের ফলে যথার্থ ধর্মের প্রসারে বিঘ্ন ঘটে এবং সংঘে অত্যন্ত বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। মৌর্য সম্রাট অশোকের রাজত্বকালে অনুষ্ঠিত তৃতীয় বৌদ্ধ সংগীতিতে প্রথম অভিধর্মের উল্লেখ পাওয়া যায় এবং ‘কথাবত্থুপ্পকরণ’ নামক অভিধম্মপিটকের গ্রন্থটি সংকলিত হয় এবং সাথে সাথে সদ্ধর্মের পুনঃপ্রতিষ্ঠাতে সসাগরা পৃথিবী প্রকম্পিত হয়। এছাড়াও অশোকের অনুশাসনগুলিও বৌদ্ধধর্মের প্রচার ও মানুষের নৈতিক চরিত্রের উন্নতিসাধনে যথেষ্ট সচেষ্ট হয়েছিল। চতুর্থ বৌদ্ধ সংগীতি নিয়ে নানা মতানৈক্য ও বিভ্রান্তিকর তথ্য থাকলেও সম্রাট কণিম্বের রাজত্বকালে অনুষ্ঠিত চতুর্থ সংগীতিতেই যে বৌদ্ধসংঘের বাক্- বিতণ্ডা ও বিশৃঙ্খলতার নিষ্পত্তি ঘটেছিল তা অধিকাংশে স্বীকৃত হয়। সংগীতির অধিবেশনের সমাপ্তির সঙ্গে সঙ্গেই বৌদ্ধগ্রন্থসমূহের লিখিত রূপ প্রত্যক্ষ করা যায়। বৌদ্ধধর্মের ইতিহাসে সংগীতিগুলির গুরুত্ব যে অপরিসীম তা বলাই বাহুল্য।
‘বয়ধম্মা সংখারা’ অর্থাৎ ‘সকল উৎপন্ন বস্তুই বিনাশশীল’ বুদ্ধের এই মত তাঁর ধর্ম সম্বন্ধেও প্রযোজ্য। যে ধর্মের দেশে-বিদেশে এত প্রসার ও প্রতিপত্তি, যার প্রভাবে ভারতীয় সংস্কৃতি ও সাধনা বহুদূর দেশে বি¯তৃতিলাভ করে সত্যতার আলোকদান ও নবপ্রাণ সঞ্চার করেছে ভারতবর্ষ থেকে সম্পূর্ণ লুপ্ত না হলেও তা ক্রমে অবলুপ্তির পথে কেন পা বাড়িয়েছে তা আলোচনা সাপেক্ষ।
সব ধর্মই তা যতই মহান হোক না কেন অনুকূল পরিবেশেই তা বিস্তারলাভ করে এবং বৌদ্ধধর্মের ক্ষেত্রেও তার অন্যথা ঘটেনি। বুদ্ধের জীবদ্দশাতেই বৌদ্ধধর্ম ব্যাপক প্রসারলাভ করলেও খৃষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে মৌর্য সম্রাট অশোকের পৃষ্ঠপোষকতায় তা প্রায় সমগ্র ভারতবর্ষে তথা বহির্বিশ্বে বিস্তারলাভ করে এবং পৃথিবীর বুকে এক অন্যতম ধর্মরূপে প্রতীয়মান হয়। বস্তুতঃ এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকা- তিনটি মহাদেশেই অশোক প্রেরিত ধর্মপ্রচারকগণ ধর্ম প্রচারার্থে গমন করেন। বহির্বিশ্বে বৌদ্ধধর্ম যেমন দক্ষিণে সিংহল (শ্রীলঙ্কা), ব্রক্ষদেশ (মায়ানমার), শ্যামদেশ (থাইল্যাণ্ড), কম্বোডিয়া, চম্পা (ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া জাভা, সুমাত্রা, বালি, বোর্ণিও) প্রভৃতি স্থানে ছড়িয়ে পড়ে তেমনি উত্তরে অর্থাৎ মধ্য এশিয়া (কাশগড়, কুছ, তুরফান, খোটান) তিব্বত, চীন, কোরিয়া, জাপান ও মঙ্গোলিয়াতেও প্রভূত বিস্তৃতি লাভ করেছে।

Monday, November 18, 2013

0 বুদ্ধের বাণী অহিংসা পরম ধর্ম আজ কোন পথে (২)

যার মধ্যে অতীতের অনন্ত পূর্ণরাশি ও ভিক্ষু জীবন লাভের পারমী  ব্রিধমান একমাত্র সেই পারবে এই দুলর্ভ ও অতুলনীয় ত্যাগী জীবন যাপন করতে, যার-তার পক্ষে ত্যাগী জীবন লাভ করা সম্ভব নয়। (কথার কথা অনেক কিছুই  বলা যায় কাজে পরিণত করা অনেক কষ্টের) একজন ত্যাগী জীবন যাপন কারী শীলবান ভিক্ষুর পক্ষে কি সম্ভব,অন্য নিকায়ের ভিক্ষুর প্রতি হিংসা পরায়ন হয়ে নিজ নিকায়কে বড় করতে এবং নিজেকে শীলবান সাজাতে আমার মনে হয় সম্ভব নয়। আমি যদি প্রকৃত শীলবান হই আমার নিকায় যদি বিশুদ্ধ হয় তবে আমার শীলময় জীবনের সুগন্ধ বাতাসের অনুকূলে ও প্রতিকূলে প্রভাহিত হবে (বুদ্ধ বলেছেন )। যে প্রকৃত জ্ঞানী যে কখনো বলবে না আমি জ্ঞানী অন্য সবাই মূর্খ।

মাঝে মাঝে বিভিন্ন দূর গ্রামের উপাসক/ উপাসিকাদের সাথে দেখা হয়, প্রথমে বন্দনা করেন তার পর নাম জিজ্ঞাসা করেন,কোন বিহারে অবস্থান করি তা জানতে চান। আমি আস্তে আস্তে সব সঠিক ভাবে বলি সব জানার পর উপাসক বা উপাসিকাটি বলেন আপনিতো ঐ নিকায়ের ভিক্ষু তার পর শুরু হয় শিশুকাল থেকে শিক্ষা দেয়া সেই সমাজের ক্ষতিকর বাণী আমাদের নিকায়ের ভিক্ষুর কাছ থেকে শুনেছি আপনাদের নিকায়ের ভিক্ষুরা বিনয় মানে না। এমন করেন-তেমন করেন। তখন আমি কিছু বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছি শুধু চিন্তা শক্তি দিয়ে চিন্তা করি আমরা ভিক্ষুরা বুদ্ধের অহিংসা নীতি কিভাবে আচরণ করছি। এটাই কি তার নমুনা, যেমন বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন কর্মকান্ডে প্রধান বিরোধী দল বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে সুকর্মকে ধামাচাপা দিচ্ছে, ঠিক সেরুপ ভাবে বর্তমানে কিছু নাম ধারী শীলবান ভিক্ষু পূর্ব পূরুষের বিভিন্ন কর্মকান্ডকে এবং পূর্ব পূরুষের অবদানকে অস্বীকার করছে।
আমরা ভিক্ষুরা রাস্তায় চলাফেরা করার সময় কিছু ব্যধর্মী লোক আমাদেরকে বিভিন্ন ভাবে অপমানিত করার জন্য বিভিন্ন কথা বলেন - যেমন মোরগ আছে মুরগি নাই(রাতা আছে খুওরি নাই)
লাউলি-পাওলি ইত্যাদি শুনে মনে বড় কষ্ট লাগে। আবার যখন বুঝতে পারি তারাতো আমাদের ব্যাপারে বা আমাদের ধর্মীয় ব্যাপারে জানেন না তাই বলছে তখন কষ্ট অনেকটা কমে যায়। যখন শুনি আমাদের বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারি উপাসক-উপাসিকাদের মুখ থেকে আপনিতো ঐ নিকায়ের ভিক্ষু , ঐ নিকায়ের ভিক্ষুরাতো বিনয় মানে না, একথা শুনার সাথে সাথে মনে হয়,দেবদত্ত যে পাথরটি বুদ্ধের উদ্দেশ্য মেরেছিল সেটি যেন আমার মাথায় পড়ল।
হিন্দু বা সনাতন ধর্মে দেখা যায় ব্রাক্ষণ বংশের লোকজন যদি যোগী বংশের অথবা কর্মকার বংশের লোকজন এর সাথে বসে আহার করেন তবে ব্রাক্ষণ এর পাপ হয় অথবা জাত যাবে। ভগবান বুদ্ধ মানুষ মানুষের সাথে পাশে বসে আহার করলে ধর্ম বা জাত চলে যাবে অথবা পাপ হবে(আমার জানা মতে ) এ রকম কোন বাণী প্রচার করেননি। বুদ্ধ বলেছেন পাপীকে নয় পাপকে ঘৃণা কর। ঐ নিকায়ের ভিক্ষু এ নিকায়ের ভিক্ষুর সাথে বসে আহার করলে কি ভিক্ষুত্ব চলে যাবে না কি শীলের পরিহানি হবে। যদি শীলের পরিহানি হয় তবে যারা এরুপ বলেন আবার তারাই বৌদ্ধ প্রতিরুপ দেশ (থাইল্যান্ড) গিয়ে বুদ্ধেও বিনয় বহির্ভূত ভিক্ষুদের সাথে আহার করেনÑসংঘদান গ্রহণ করেন। যাদেরকে থাইল্যান্ড ভিক্ষু মহাসভার বিজ্ঞ ভিক্ষু- সংঘ বুদ্ধের বিনয় সংশোধণ করে ভিক্ষু বা উপসম্পদা দেবার ব্যাবস্থা করেছেন। বাংলদেশের বিনয়ধারী ভিক্ষুরা থাইল্যান্ডের নপুংসক ভিক্ষুদের সাথে সংঘদানে অংশগ্রহণ করলে কিছু যাই আসে না। আমরা ভিক্ষুরা ধর্মদেশনা করার সময় বলে থাকি একজন দুঃশীল ভিক্ষু সংঘের সাথে একত্রিত হলে সেই দুঃশীল ভিক্ষু দুঃশীল দূরীভূত হয় সংঘের গুনের প্রভাবে, সংঘ সব সময়, সব স্থানে সর্ব অবস্থান বিশুদ্ধ ঐ দেশনার বাণী যদি সত্য হয় তবে ঐ নিকায়ের ভিক্ষুর সাথে আমি যদি সংঘদানে অংশগ্রহণ করি বা আহার কার্য্য সম্পন্ন করি তবে আমার শীলের পরিহানি হবে বলে আমার মনে হয় না। বৌদ্ধ জনসাধারণের উন্নতির কথা চিন্তা করে গৃহী সমাজ ও ভিক্ষু সংঘ আমরা সকলে একত্রিত হয়ে বুদ্ধের অহিংসা বাণী অনুশীলন করে বাংলাদেশী বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের উন্নতি সাধন করতে পারি,তবে আমাদেরকে ক্ষুদ্র বিষয় ত্যাগ করতে হবে,চিন্তায় আনতে হবে কিভাবে শান্তপ্রিয় বৌদ্ধ জনসাধরণের বৃহৎ কল্যাণ সাধন করা যায়। আমরা বৌদ্ধরা রাজনীতি করি শুধু বিহার নিয়ে তার চেয়ে বেশি দূর যাওয়া হয়ে উঠে না। বিহার ভিত্তিক রাজনীতি পরিত্যাগ করে সামাজিক ভাবে,সাংগঠনিক ভাবে ও রাষ্ট্রিয় ভাবে উন্নতি সাধন করে সম্মানিত আসনে আসিন হওয়া আমাদের লক্ষ হউক। আসুন আমরা সবাই এক সাথে বুদ্ধের অন্যতম বাণী অহিংসা পরম ধর্ম যথাযথ ভাবে আচরণ করি এবং আমাদের আচারণের দ্ধারা নতুন প্্রজন্ম যুবসমাজ হিংসা পরিত্যাগ করে একত্রিত হয়ে বৃহৎ উন্নতি সাধন করুক।
পরিশেষে আশা করি,বিজ্ঞ ভিক্ষু মহোদয়গণ ও সুধীমহল আমার ভুলভ্রান্তি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন এবং এ বিষয়ে সঠিক দিকনির্দেশনা দিয়ে সমাজের কল্যাণ সাধনে এগিয়ে আসবেন। 
               বাংলাদেশী সকল বৌদ্ধদের মনে প্রাণে
               বুদ্ধের অহিংসা নীতি প্রচলিত হউক।

লেখক-ভদন্ত প্রিয়দেব ভিক্ষু,অধ্যক্ষ-অজান্তা নগর, অজান্তা বিহার,বৌদ্ধ পল্লী,চট্টগ্রাম।

0 বুদ্ধের বাণী অহিংসা পরম ধর্ম আজ কোন পথে (১)

সর্বদর্শী ভগবান বুদ্ধ সুর্দীঘ পয়তাল্লিশ (৪৫) বছর ব্যাপি মানব সহ সকল প্রাণীর মঙ্গলের জন্য অমৃতময় বাণী প্্রচার করেছেন।সেসব বাণী গুলি যারা পালন করে জীবন যাপন করেন তারা বর্তমান জীবনে সুখ শান্তি লাভ করতে পারে এবং মৃত্যুর পর সুগতি প্রাপ্ত হয় । ভগবান বুদ্ধের অন্যতম বাণী হল অহিংসা পরম ধর্ম অর্থাৎ সকল জীব তথা সকল মানবের প্রতি সমভাবে মৈত্রী প্রদর্শন করা। হিংসা পরিহার করে অহিংসাময় জীবন যাপন করতে নির্দেশ দিয়েছেন। মা যেমন সন্তানের প্রতি অবিরত ভাবে অহিংসা পরায়ন থাকেন ঠিক সেরুপ ভাবে সকল জীব তথা মানবের প্রতি সকল মানব অহিংসা পরায়ন হলে সুন্দর পৃথিবীতে সুন্দর ভাবে মানবগন সুখে জীবন যাপন করতে পারবে। আজ আধুনিক বিশ্বে বুদ্ধের বাণী আহিংসা না থাকার কারণে মারা-মারি,যুদ্ধ,রক্তপাত সহ বিভিন্ন ভাবে মানুষের জীবন যাপন হয়ে উঠছে বিষাদময়।
অন্য ধর্মের অনুসারিদের কথা বাদ দিয়ে শুধু বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারিদের কথায় আসা যাক,যেহেতু আমরা নিজেরা নিজেদেরকে বৌদ্ধ বলে দাবি করি সেহেতু বুদ্ধের বাণী মেনে চলা আমাদের কর্তব্য । আসলে আমরা কি বুদ্ধের বাণী অহিংসা পরম ধর্ম বাণীটি মেনে চলি বা আমরা বিশ্বাস করি, যদি বিশ্বাস করি তবে আমাদেরকে হিংসা পরিহার করতে হবে। আমরা যারা বৌদ্ধ আমরা কি যথাযথ ভাবে বুদ্ধের বাণী অনুসরণ করছি। আমার মনে হয় আমি করছিনা, যদি আমিসহ আমরা সবাই বুদ্ধের বাণী অহিংসা পরম ধর্ম পালনে রত থাকতাম তবে আজ দেশে, সমাজে,বিহারে, সংগঠনে, নিকায়ে এত ভেদাভেদ কথা কাঁটা-কাটি, মামলা-মোর্কাদ্দমা হত না।

 গৃহী সমাজে বুদ্ধের অহিংসা নীতির প্রতিপালন:
গৃহীরা সংসার ধর্ম পালন করেন,সংসারে আনন্দ-উল্লাস,হাসি-কান্না,মান-অভিমান,সুখ-দুঃখের মধ্যে দিয়ে মানুষ জীবন যাপন করেন। বুদ্ধের ভাষায় মানব জীবন অতি দুর্লভ,অতীতের অনন্ত অনন্ত পূর্ণ রাশির প্রভাবে মানব জীবন লাভ করা যায়। অনেক বিজ্ঞ ব্যাক্তি বলেন মানব হল সৃষ্টির সেরা জীব। সমাজে জীবন যাপন কালে সমাজকে উন্নত করার জন্য এবং একতা বদ্ধ ভাবে সুখে জীবন যাপনের জন্য সামাজিক সংগঠন বা সমিতি স্থাপন করা হয়। নিজ ধর্ম আচরনের জন্য বিহার ও ভাবনাকেন্দ্র স্থাপন করা হয়। সংগঠন মানে আমি যা বুঝি তা হল সকলে একত্রিত হয়ে সমাজের, দেশের ও সর্বসাধারনের মঙ্গল বা হিত সাধন করা। এখন আমাদের বাংলাদেশের বৌদ্ধ সমাজে বৌদ্ধ সংগঠনের সংখ্যা বাংলাদেশের যত প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে প্রায় তার সমান। যদি সকল সংগঠন নিজ নিজ সাধ্য অনুযায়ি উন্নয়নমুলক কর্ম সম্পাদন করতেন তবে বাংলাদেশের বৌদ্ধরা আজ অনেক ক্ষেত্রে উচ্চ আসনে সমাসিন হতে পারতেন। অহিংসা নীতি যথাযথ ভাবে পালন না করায় আজ আমরা বৌদ্ধরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবহেলিত । বিশেষ করে বৌদ্ধরা, বৌদ্ধদের ক্ষেত্রে অহিংসা পরায়ন হয় না । যারা সমাজের কান্ডারি বলে সমাজে কান্ডারির আসন দখল করে আছে তাদের অনেকের কারণে সমাজ উন্নতির চেয়ে বেশি ক্ষতি গ্রস্ত। আমরা যারা সমাজের উন্নতির কথা ভাবি আবার দেখা যায় তারা নিজের স্বার্থ রক্ষার্থে সমাজের ক্ষতি সাধন করে থাকি। আজ সে সকল সমাজ সেবকদের কারণে বৌদ্ধ পাড়ায়, বৌদ্ধ বিহারের পাশে, অন্য ধর্মের অনুসারিরা বসত-বাড়ী নির্মাণ করে বিভিন্ন ভাবে আমাদের ধর্মের ক্ষতি সাধন ও ক্ষতি কারক হিসাবে রুপ নিচ্ছে। তারা কি একটু ও চিন্তা করেন না। আমার সামান্য স্বার্থের জন্য আমার ধমের্র-সমাজের-পরিবারের অপূরনীয় ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। যদি চিন্তায় আসতো তবে ভাই-ভাই এর সাথে বিবাদ করে, অহিংসা নীতি ভুলে গিয়ে অন্য ধর্মের অনুসারিদের হাতে পূর্ব পূরুষের বাড়ী, পুকুর, শশ্মন তুলে দিতো না। এই সকল সমস্যায় চোখ-কান না দিয়ে মৃত বাসরে স্মৃতিচারণ করে –অপরের সমালোচনা করে-সংগঠন করে-বিহার ভিত্তিক রাজনীতি করে কি সমাজের উন্নতি সাধন করা যাবে। আমাদের মাঝে বুদ্ধের অহিংসা নীতি যথাযথ ভাবে  আচরণের অভাবে উন্নতির স্তানে অবনতির আলামত দেখা যাচ্ছে।

শাক্যমিত্র বড়ুয়ার একটি কীর্তনে গেয়েছেন-আমরা নাকি বৌদ্ধ জাতি সবাই বলে সরলমতি..... গানের কথাটা শত ভাগ সত্য। কিন্তু আমরা সরল অন্য ধর্মের অনুসারিদের ক্ষেত্রে,বৌদ্ধরা বৌদ্ধেদের জন্য সরল না, ভাই-ভাই এর ক্ষেত্রে অনেক কঠিন, পিতা-পুত্রের ক্ষেত্রে অনেক কঠিন, আতœীয়-আতœীয় ক্ষেত্রে স্বার্থের জন্য অনেক কঠিন রুপধারণ করেন। একে অন্যের প্রতি হিংসা পরায়ন হয়ে অশোভনীয় কার্য্য, অসহনীয় আঘাত অপ্রতাশিত দুঃখ দিচ্ছে এবং দুঃখ পাচ্ছে।
 ভিক্ষু সমাজে অহিংসা নীতির প্রতিপালন:
অহিংসকা যে মুনয়ো নিচং কায়েন সংবুতা
তে যন্তি অচ্চুতং ঠানং যত্থ গন্ত¡া ন সোচরে।     ২২৫ ধর্মপদ
যে সকল মুনি অহিংসা পরায়ণ এবং সতত কায়-সংযত, তাহাঁরা
এমন অচ্যত স্থানে (নিবার্ণে) গমন করেন,যেখানে গিয়া শোক করিতে হয় না।

লেখক-ভদন্ত প্রিয়দেব ভিক্ষু,অধ্যক্ষ-অজান্তা নগর, অজান্তা বিহার,বৌদ্ধ পল্লী,চট্টগ্রাম।

পাট:-(১)

Sunday, November 17, 2013

0 নামসিদ্ধি জাতক

পুরাকালে বোধিসত্ত্ব তক্ষশিলা নগরে একজন বিখ্যাত আচার্য ছিলেন। পাঁচশতশিষ্য তাঁর বিদ্যাভ্যাস করত। এই সব ছাত্রদের মধ্যে একজনের নাম ছিল পাপক। অন্যান্য ছাত্ররা তাকে সব সময় এস পাপক’, যাও পাপক বলত। তাতে পাপক চিন্তা করতে লাগল, আমার নাম অমঙ্গল সূচক। অতএব আমি অন্য একটি নাম গ্রহণ করব। পাপক তাই আচার্যের কাছে গিয়ে বলল, গুরুদেব, আমার বর্তমান নামটা অমঙ্গলসূচক। আমার অন্য একটি নাম রাখুন। আচার্য বললেন, যাও, তুমিজনপদে গিয়ে ঘুরে একটা মঙ্গল সূচক নাম ঠিক করে এস। তুমি ফিরে এলে তোমারবর্তমান নামটা পরিবর্তন করে অন্য নাম রাখব। পাপক তখন যাত্রা শুরু করল।সে গ্রামে গ্রামে ঘুরে একটি নগরে গিয়ে উপস্থিত হলো। সেই নগরে জীবক নামে একটি লোকের মৃত্যু হয়েছিল সেদিন। জ্ঞাতি কুলগণ তার সৎকারের জন্য তার মৃতদেহ নিয়ে যাচ্ছে দেখে পাপক জানতে চাইল, এই লোকটির নাম কি ছিল?তারা বলল, এর নাম ছিল জীবক। পাপক তখন আশ্চর্য হয়ে বলল, সেকি! জীবক মানেই ত যে দীর্ঘজীবি। সেই জীবকেরও মৃত্য হলো। তখন সেই শবযাত্রারা বলল, জীবকেরও মৃত্যু হয়, অনীবকেরও মৃত্যুহয়। মরা বাঁচা কি নামের উপর নির্ভর করে? নাম তো কোন বস্তু বা ব্যক্তিকেচেনার বা জানার একটা উপায়। তুমি ত দেখছি বড় মোটা বুদ্ধির লোক।

এই কথা শুনে পাপক তা নাম সম্বন্ধে মধ্যমভাব অবলম্বন করল। অর্থাৎ তার নামের উপর বিরক্তি বা অনুরক্তি রইল না
পাপক এবার নগরের ভিতরে গিয়ে দেখল একটি বাড়ির দরজায় এক দাসীকে এক প্রভু ওপ্রভুপত্নী দড়ি দিয়ে প্রহার করছে।
পাপক তখন সেই দাসীর প্রভুর কাছে জানতেচাইল, আপনারা একে প্রহার করছেন কেন?
প্রভু তখন বলল, এই দাসী আজকের উপার্জনের টাকা পয়সা কিছু আনেনি।
পাপক তখন জানতে চাইল, এর নাম কি?
দাসীর প্রভু বলল, এর নাম ধনপালী।
পাপক আশ্চর্য হয়ে বলল সেকি! এর নাম ধনপালী, অথচ এর একদিনের বেতন দেবার ক্ষমতা নেই।
তারা বলল, নাম ধনপালী হোক, বা অধনপালী হোক, তা কি অদৃষ্টিকে এড়াতে পারে? নামে কি আসে যায়?
নাম শুধু ব্যক্তি কে, এই পরিচয় পাওয়া যায়। তুমি দেখছিঅতি স্থুলবুদ্ধি।
এই কথা শুনে পাপক তা নিজের নাম সম্বন্ধে আগেরবিদ্বেষ ভাব ত্যাগ করল। সে নগর হতে বাইরে গিয়ে পথ চলতে লাগল।
কিছুদূরগিয়ে সে দেখল, একটি লোক পথ হারিয়েছে।
পাপক তার কাছে জানতে চাইল, আপনি কি করছেন?
লোকটি বলল, আমি পথ হারিয়ে ফেলেছি, তাই পথ খুঁজছি।
পাপক তার কছে নাম জানতে চাইল।
লোকটি বলল, আমার নাম পন্থক।
পাপক একথা শুনে আশ্চার্য হয়ে ভাবল, পন্থক মানে যে অপরকে পথ দেখায়।
তাই সে বল্ল, সেই! যে পন্থক সে পথ হারায় কি করে?
লোকটি বলল, পন্থক হোক অপন্থকই হোক সব লোকই পথা হারায়। নামে কি আসে যায়?
নাম শুধু কোন ব্যক্তি কে, এই পরিচয় জানা যায়। তোমার বুদ্ধি ত দেখছি খুবমোটা।
এবার পন্থক নিজের নাম সম্বন্ধে সম্পূর্ণ রূপে বিদ্বেষ হীন হলো।সে আচার্যের কাছে ফিরে গেল।
আচার্য তাকে জানতে চাইল, কি বতস নাম নির্বাচনকরে এলে?
পাপক বলল, গুরুদেব , যার নাম জীবক সেও মরে, যার নাম অজীবক, সেও মরে।
যার নাম ধনপালী সেও দরিদ্র হয় আর যার নাম অধনপালী সেও দরিদ্রহয়।
যার নাম পন্থক সেও পথ হারায়, যার নাম অপন্থক সেও পথ হারায়।
নামে কিআসে যায়? এখন দেখছি, নামের কোন সারবত্তা নেই।
নামদ্বারা কোন বস্তু বাব্যক্তি দে কি তা শুধু জানা যায়। নামে সিদ্ধি লাভ হয় না।
সিদ্ধিলাভের উপায় হলো কর্ম। অতএব আমার অন্য নামের প্রয়োজন নেই।
আমার যে নাম আছে তাই থাকুক।

পপকের সব কথা শুনে বোধিসত্ব এই উপদেশ দান করলেন যে, নামে কিছু আসে যায়না।
একমাত্র সিদ্ধিদাতা হচ্ছে কর্ম- এই সত্য যেন সবাই মনে রাখে।

 
সূত্রঃhttp://www.nirvanapeace.com

Monday, November 11, 2013

0 বিশাখা

বিশাখাঃ ভন্তে,আমার শ্বশুর বাসী খাবার খাচ্ছেনআপনাকে দান করবার মন নেই
শ্বশুরঃবাইরের মানুষের সামনে তুমি আমাকে অপমান করলে? ধরণের পুত্র বঁধু আমি চাইনাতুমি বাপের বাড়ী চলে যাও
বিশাখাঃপিতা,আমি কেন বলেছি কথা?কারণ আপনি পূর্ব জন্মের পুণ্যের ফলগুলো ভোগ করছেনপূর্ব জন্মের পুণ্যগুলোকে বাসী বলেছিআপনার খাবারকে নয়আপনি যদি জন্মে দান না করেন তাহলে ভাবী জন্মে রকম খাবার পাবেন নাপুণ্যই সকল সুখের মূল উৎস
শ্বশুরঃআসলেই আমার পুত্রবঁধু অনেক জ্ঞানী
বিশাখা তার শ্বশুরকে মার্গ-ফলে প্রতিষ্ঠিত হতে সাহার্য্য করেছিলেনতাই বিশাখার অপর নাম মিগার মাতাপ্রতিটি ঘর ধার্মিক পুত্র বঁধু কামনা করে থাকে

Friday, November 1, 2013

0 ত্রিচৈত্য বন্দনা

বন্দামি চেতিযং সব্বং সব্বপ্ঠানেসু পতিট্ ঠিতং
 সারীরিক ধাতুং মহাবোধিং বুদ্ধরূপং সকলং সদা।

0 বৌদ্ধদের স্মরণীয় তিন মাস

                                              
                            পালি
১.নিব্বত্তি অভিসম্বোধি পরিনিব্বাণ মেব চ, তিস্সিমা লোকনাথস্স বেসাখ পুণ্নমাসিযং।
২. পটিসন্ধি নিক্খমনং ধম্মচক্ক পবত্তনং, তিস্সিমা লোকনাথস্স আসাল্ হি পুণ্নমাসিযং।
৩ আযুসঙ্খার মোস্সজ্জি মাঘপুণ্নমাসিযং জিনো, তযো এতে মহামাসা মাসত্তযং কতা ইমে।
                                      






                                                                   বাংলা
১.বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিতে লোকনাথ বুদ্ধের জম্ন, অভিসম্বেধি ও পরিনির্বাণ, এই তিনি মহান ঘটনা সংঘটিত হয়োছিল।
২, আষাঢ়ী পূর্ণিমা তিথিতে লোকনাথ বুদ্ধেরে মাতৃগর্ভে প্রতিসন্ধি, মহাভিনিস্ক্রমণ এবং ধর্মচক্র প্রবর্তন, এই তিনি মহান  ঘটনা সংঘটিত হয়োছিল।
৩. মাঘী পূর্ণিমা তিথিতে আয়ুসংস্বার বিসর্জন আর্থাৎ পরিনির্বাণের ঘেষণা করেছিলেন, সুতরাং এই মহামাস নামে কথিত।