Friday, January 17, 2014

0 বুদ্ধের ধর্মে চিত্ত বা মন কতটা গুরুত্ত্বপূর্ণ ?

বুদ্ধের ধর্মে চিত্ত বা মন কতটা গুরুত্ত্বপূর্ণ তা সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দিতে ,মারবিজয়ী জীবন্ত আরহত্ পরমপূজ্য উপগুপ্ত ভান্তের সাথে পরনির্মিত বশবর্তী দেবপুত্র মার এর একটি ঘটনা সংক্ষেপে তুলে ধরলাম:

জগতে বুদ্ধের কায়িক রুপের নিমিত্ত ধারণ করতে পারেন দুইজন । ১।মহাকাল নাগরাজ ২।দেবপুত্র মার ।অর্থাৎ এই দুইজন তাদের নিজ শরীর দিয়ে বুদ্ধের ৩২ প্রকার লক্ষণ এবং ৮০ প্রকারের অনুব্যঞ্জন সমন্বিত অতুলনীয় দেহপ্রভা প্রদর্শন করতে পারেন । যাই হোক সম্রাট অশোক যখন বুদ্ধের পরিনির্বাণের প্রায় ২৫০ বছরের ও অধিক সময় পর ,শাসন সদ্ধর্মের স্থিতি ও উন্নয়নের জন্য ৮৪ ধর্মস্কন্ধ সম্বলিত ৮৪ হাজার ধর্মচৈত্য উত্সর্গ করছিলেন ঠিক সেই সময় যাতে ধর্মন্তরায় ও পূন্যন্তরায় না হয় ,মারের উপদ্রব না হয় তার দায়িত্ত্ব দেওয়া হয়েছিলো উপগুপ্ত ভান্তকে ।উপগুপ্ত ভান্তে যথাসময়ে দেবপুত্র মারকে ঋদ্ধিশক্তি অধিষ্টান জনিত বন্ধন দিয়ে এক পর্বতের সাথে বেঁধে রাখলেন ।পরবর্তীতে অনুষ্টান শেষ হওয়ার পর বন্ধন খুলে দিলেন ।সেই সময়ে উপগুপ্ত ভান্তে মারকে বললেন আমি শাস্ত্রপাঠ দ্ধারা এবং বুদ্ধের ধর্মের চরম ও পরম সীমায় (অরহত্ মার্গফল) পৌছে সুগতের ধর্মদেহ (ধর্মকায়) দর্শন করেছি ।কিন্তু নয়ন রঞ্জন স্বরুপদেহ দেখিনি ।এই বলে মারের নিকট বুদ্ধরুপ প্রদর্শনের ইচ্ছা প্রকাশ করলেন । মার দেবতা উপগুপ্ত ভান্তের কথায় রাজী হলেন কিন্তু শর্ত একটা দিয়ে রাখলেন ,যেন কিছুতেই পূজনীয় ভান্তে মারকে বুদ্ধরুপ ধারণের পর বন্দনা না করেন ।উপগুপ্ত ভান্তে মারকে প্রতিশ্রতি দিলেন যে আমি বন্দনা করব না ।আজ মার স্বয়ং সর্ব অবয়ব ধরে বুদ্ধরুপ ধারণ করবেন এই কথা নগরের সর্বত্র প্রকাশ হওয়ার পর অগণিত নর নারী ও ভিক্ষু সংঘ ফুল ,মালা ,সুগন্ধি ,ও বিবিধ উত্কৃষ্টতর পূজোপকরণ নিয়ে উপস্থিত হলেন ।পরবর্তীতে মার শ্রদ্ধেয় উপগুপ্ত ভান্তের অভিলাষ পূরণ করার জন্য স্বীয় মাররুপ পরিত্যাগ করে বুদ্ধের সর্ব অবয়ব ,৩২মহাপুরুষ লক্ষণ ও ৮০ প্রকার অনুব্যঞ্জন এবং অপরুপ ৬ রশ্মি পরিপূর্ণ অচিন্তনীয় স্নিগ্ধ সমুজ্জ্বল প্রভাবশ্রী প্রকাশ করে ধ্যানে সমাসীন হলেন ।এতে মনে হলো যেন বুদ্ধগয়ার বোধিদ্রুপ মূলে বজ্রাসনে বুদ্ধ ধ্যানে মগ্ন । বুদ্ধের ষড়রশ্নির আলোয় আলোকিত হলো চারদিক ।আগত লোকজন বুদ্ধের অপরুপ দেহকান্তি দেখে যেমনি মোহিত হলেন তেমনি অগাধ শ্রদ্ধায় প্রাবল্যে ধূপ দীপ ,বিচিত্র পুষ্প মাল্য ,সুগন্ধদ্রব্যদি সহ বিবিধ পূজোপকরণ দিয়ে বুদ্ধরুপকে পূজা করলেন ।অন্যদিকে পূজ্য উপগুপ্ত ভান্তে স্বয়ং মারের এরুপ দৃশ্য দেখে মনে মনে চিন্তা করলেন অহো !লোভ ,দ্ধেষ ,মোহ পরায়ন মার বুদ্ধরুপ ধারণ করার পর কতই না শোভনীয় ,অনুপম ,অপরুপ ষড়রশ্মি দিব্য কান্তিময় দেহের প্রভায় জ্যোতিময় আলোয় জগত্ উদ্ভাসিত হলো । কি জানি লোভহীন ,দ্ধেষহীন ,মোহহীন তথাগত বুদ্ধ কতই না মহা বৈভব সম্পন্ন সমগ্র চক্রবাল উদ্ভাসিত করা আলোক প্রাপ্ত মহামানব ছিলেন ! পূজ্য উপগুপ্ত ভান্তে মারের এরুপ দৃশ্য দেখে আবেগ আপ্লুত হয়ে বুদ্ধরুপ প্রীতিতে বন্দনা না করে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলেন না ।উপগুপ্ত ভান্তে বন্দনা করার সাথে সাথে মার বুদ্ধরুপ পরিত্যাগ করলেন ।

এইবার আসা যাক আলোচ্য বিষয়ে । মার উপগুপ্ত ভান্তেকে বললেন প্রভু কেন আমাকে অপরাধী করলেন ।আমি কি গুণে আপনার বন্দনার পাত্র হতে পারি ? আমাকে বন্দনা করা কি উচিত হয়েছে ?কেন আপনি প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করলেন ?উপগুপ্ত ভান্তে মারের এই কথা শুনে বললেন দেখ মারপতি আমি বুদ্ধরুপ দর্শনে এতই অভিভূত হয়েছিলাম যে মনে হয়েছে শ্রীবুদ্ধের দিব্যজ্ঞানের জ্যোতিঃ যেন পুনরায় পৃথিবীতে উদিত হলো ।তাই বুদ্ধরুপ ভিত্তি করে বন্দনা করেছি তোমাকে বন্দনা করিনি ।এতে প্রতিজ্ঞা ও ভঙ্গ হয় নি । তাহলে দেখুন তো চিত্ত বা মন কতটা গুরুত্ত্বপৃর্ণ ।উপগুপ্ত ভান্তে যেমন তেমন অরহত্ নন ।বুদ্ধের বরপ্রাপ্ত অরহত্ ,ঋদ্ধিমান অরহত্ ,তিনি বন্দনা করলেন বুদ্ধরুপ কে যদিও সে বুদ্ধরুপের অন্তরালে ছিল মার যে কিনা ৫ মারের ১মার ,যার কাছ থেকে মুক্ত থাকতে চাই আমরা ।যে কিনা ধর্মানুষ্টানে অন্তরায় করতে এসেছিলো তাকেই বন্দনা করলেন অরহত্ উপগুপ্ত ভান্তে ।এর একমাত্র কারণ চিত্ত বা মন । ধর্মপদের প্রথম গাথায় আছে মন সকল ধর্মসমূহের পূর্বগামী ।কেউ যদি প্রদুষ্ট চিত্তে কিছু করে তবে দুঃখ তার ছায়া হবে আর প্রসন্ন চিত্তে কিছু করলে সুখ তার ছায়া হবে ।কাজেই আসুন চিত্ত কে বুজার চেষ্টা করি ,পাপ পূণ্যের ক্ষেত্রে চিত্তকে অগ্রগামী করি ।বুদ্ধ শুন্য কল্পে বালু কে জাদি বা চৈত্য বানিয়ে সেই বালি স্তুপ কে বুদ্ধ মনে করে পূজা বন্দনায় ও অগনিত অপ্রমেয় পুণ্য হত ।আমরা অনেক ভাগ্যবান বর্তমানে বাংলাদেশে বুদ্ধের ধাতু জাদী আছে বান্দরবানে ।কেউ যদি স্বয়ং জীবিত বুদ্ধকে পূজার ন্যায় পূজা বন্দনা করতে চান তবে বুদ্ধের ধাতু জাদীতে পূজা করুণ অপ্রমেয় অপ্রমেয় চিন্তার বাইরে পুণ্য হবে ।বুদ্ধকে বন্দনা তো করব সাথে উপগুপ্ত ভান্তেকে ও বন্দনা করব এই চিন্তা আনয়ন করুণ । জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক ।আমার ধর্মদান জনিত পূন্য দ্ধারা আমি সহ জগতের সকল প্রাণীর ৩৮ প্রকার মঙ্গল হোক । সকলের বুদ্ধগুণের প্রতি শ্রদ্ধা জাগুক ।
ছবি এবং তথ্যসূত্র:http://nirvanapeace.com
 

0 comments:

Post a Comment

 
seo