Monday, November 18, 2013

0 বুদ্ধের বাণী অহিংসা পরম ধর্ম আজ কোন পথে (২)

যার মধ্যে অতীতের অনন্ত পূর্ণরাশি ও ভিক্ষু জীবন লাভের পারমী  ব্রিধমান একমাত্র সেই পারবে এই দুলর্ভ ও অতুলনীয় ত্যাগী জীবন যাপন করতে, যার-তার পক্ষে ত্যাগী জীবন লাভ করা সম্ভব নয়। (কথার কথা অনেক কিছুই  বলা যায় কাজে পরিণত করা অনেক কষ্টের) একজন ত্যাগী জীবন যাপন কারী শীলবান ভিক্ষুর পক্ষে কি সম্ভব,অন্য নিকায়ের ভিক্ষুর প্রতি হিংসা পরায়ন হয়ে নিজ নিকায়কে বড় করতে এবং নিজেকে শীলবান সাজাতে আমার মনে হয় সম্ভব নয়। আমি যদি প্রকৃত শীলবান হই আমার নিকায় যদি বিশুদ্ধ হয় তবে আমার শীলময় জীবনের সুগন্ধ বাতাসের অনুকূলে ও প্রতিকূলে প্রভাহিত হবে (বুদ্ধ বলেছেন )। যে প্রকৃত জ্ঞানী যে কখনো বলবে না আমি জ্ঞানী অন্য সবাই মূর্খ।

মাঝে মাঝে বিভিন্ন দূর গ্রামের উপাসক/ উপাসিকাদের সাথে দেখা হয়, প্রথমে বন্দনা করেন তার পর নাম জিজ্ঞাসা করেন,কোন বিহারে অবস্থান করি তা জানতে চান। আমি আস্তে আস্তে সব সঠিক ভাবে বলি সব জানার পর উপাসক বা উপাসিকাটি বলেন আপনিতো ঐ নিকায়ের ভিক্ষু তার পর শুরু হয় শিশুকাল থেকে শিক্ষা দেয়া সেই সমাজের ক্ষতিকর বাণী আমাদের নিকায়ের ভিক্ষুর কাছ থেকে শুনেছি আপনাদের নিকায়ের ভিক্ষুরা বিনয় মানে না। এমন করেন-তেমন করেন। তখন আমি কিছু বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছি শুধু চিন্তা শক্তি দিয়ে চিন্তা করি আমরা ভিক্ষুরা বুদ্ধের অহিংসা নীতি কিভাবে আচরণ করছি। এটাই কি তার নমুনা, যেমন বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন কর্মকান্ডে প্রধান বিরোধী দল বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে সুকর্মকে ধামাচাপা দিচ্ছে, ঠিক সেরুপ ভাবে বর্তমানে কিছু নাম ধারী শীলবান ভিক্ষু পূর্ব পূরুষের বিভিন্ন কর্মকান্ডকে এবং পূর্ব পূরুষের অবদানকে অস্বীকার করছে।
আমরা ভিক্ষুরা রাস্তায় চলাফেরা করার সময় কিছু ব্যধর্মী লোক আমাদেরকে বিভিন্ন ভাবে অপমানিত করার জন্য বিভিন্ন কথা বলেন - যেমন মোরগ আছে মুরগি নাই(রাতা আছে খুওরি নাই)
লাউলি-পাওলি ইত্যাদি শুনে মনে বড় কষ্ট লাগে। আবার যখন বুঝতে পারি তারাতো আমাদের ব্যাপারে বা আমাদের ধর্মীয় ব্যাপারে জানেন না তাই বলছে তখন কষ্ট অনেকটা কমে যায়। যখন শুনি আমাদের বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারি উপাসক-উপাসিকাদের মুখ থেকে আপনিতো ঐ নিকায়ের ভিক্ষু , ঐ নিকায়ের ভিক্ষুরাতো বিনয় মানে না, একথা শুনার সাথে সাথে মনে হয়,দেবদত্ত যে পাথরটি বুদ্ধের উদ্দেশ্য মেরেছিল সেটি যেন আমার মাথায় পড়ল।
হিন্দু বা সনাতন ধর্মে দেখা যায় ব্রাক্ষণ বংশের লোকজন যদি যোগী বংশের অথবা কর্মকার বংশের লোকজন এর সাথে বসে আহার করেন তবে ব্রাক্ষণ এর পাপ হয় অথবা জাত যাবে। ভগবান বুদ্ধ মানুষ মানুষের সাথে পাশে বসে আহার করলে ধর্ম বা জাত চলে যাবে অথবা পাপ হবে(আমার জানা মতে ) এ রকম কোন বাণী প্রচার করেননি। বুদ্ধ বলেছেন পাপীকে নয় পাপকে ঘৃণা কর। ঐ নিকায়ের ভিক্ষু এ নিকায়ের ভিক্ষুর সাথে বসে আহার করলে কি ভিক্ষুত্ব চলে যাবে না কি শীলের পরিহানি হবে। যদি শীলের পরিহানি হয় তবে যারা এরুপ বলেন আবার তারাই বৌদ্ধ প্রতিরুপ দেশ (থাইল্যান্ড) গিয়ে বুদ্ধেও বিনয় বহির্ভূত ভিক্ষুদের সাথে আহার করেনÑসংঘদান গ্রহণ করেন। যাদেরকে থাইল্যান্ড ভিক্ষু মহাসভার বিজ্ঞ ভিক্ষু- সংঘ বুদ্ধের বিনয় সংশোধণ করে ভিক্ষু বা উপসম্পদা দেবার ব্যাবস্থা করেছেন। বাংলদেশের বিনয়ধারী ভিক্ষুরা থাইল্যান্ডের নপুংসক ভিক্ষুদের সাথে সংঘদানে অংশগ্রহণ করলে কিছু যাই আসে না। আমরা ভিক্ষুরা ধর্মদেশনা করার সময় বলে থাকি একজন দুঃশীল ভিক্ষু সংঘের সাথে একত্রিত হলে সেই দুঃশীল ভিক্ষু দুঃশীল দূরীভূত হয় সংঘের গুনের প্রভাবে, সংঘ সব সময়, সব স্থানে সর্ব অবস্থান বিশুদ্ধ ঐ দেশনার বাণী যদি সত্য হয় তবে ঐ নিকায়ের ভিক্ষুর সাথে আমি যদি সংঘদানে অংশগ্রহণ করি বা আহার কার্য্য সম্পন্ন করি তবে আমার শীলের পরিহানি হবে বলে আমার মনে হয় না। বৌদ্ধ জনসাধারণের উন্নতির কথা চিন্তা করে গৃহী সমাজ ও ভিক্ষু সংঘ আমরা সকলে একত্রিত হয়ে বুদ্ধের অহিংসা বাণী অনুশীলন করে বাংলাদেশী বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের উন্নতি সাধন করতে পারি,তবে আমাদেরকে ক্ষুদ্র বিষয় ত্যাগ করতে হবে,চিন্তায় আনতে হবে কিভাবে শান্তপ্রিয় বৌদ্ধ জনসাধরণের বৃহৎ কল্যাণ সাধন করা যায়। আমরা বৌদ্ধরা রাজনীতি করি শুধু বিহার নিয়ে তার চেয়ে বেশি দূর যাওয়া হয়ে উঠে না। বিহার ভিত্তিক রাজনীতি পরিত্যাগ করে সামাজিক ভাবে,সাংগঠনিক ভাবে ও রাষ্ট্রিয় ভাবে উন্নতি সাধন করে সম্মানিত আসনে আসিন হওয়া আমাদের লক্ষ হউক। আসুন আমরা সবাই এক সাথে বুদ্ধের অন্যতম বাণী অহিংসা পরম ধর্ম যথাযথ ভাবে আচরণ করি এবং আমাদের আচারণের দ্ধারা নতুন প্্রজন্ম যুবসমাজ হিংসা পরিত্যাগ করে একত্রিত হয়ে বৃহৎ উন্নতি সাধন করুক।
পরিশেষে আশা করি,বিজ্ঞ ভিক্ষু মহোদয়গণ ও সুধীমহল আমার ভুলভ্রান্তি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন এবং এ বিষয়ে সঠিক দিকনির্দেশনা দিয়ে সমাজের কল্যাণ সাধনে এগিয়ে আসবেন। 
               বাংলাদেশী সকল বৌদ্ধদের মনে প্রাণে
               বুদ্ধের অহিংসা নীতি প্রচলিত হউক।

লেখক-ভদন্ত প্রিয়দেব ভিক্ষু,অধ্যক্ষ-অজান্তা নগর, অজান্তা বিহার,বৌদ্ধ পল্লী,চট্টগ্রাম।

0 comments:

Post a Comment