এই পিটকে বৌদ্ধধর্মের দার্শনিক বিচার ও আধ্যাত্মবাদের আলোচনা রয়েছে। এর অন্তর্গত গ্রন্থসংখ্যা সাতটি- ১.ধম্মসঙ্গনি, ২.বিভঙ্গ, ৩.ধাতুকথা, ৪.পুলপঞ্জতি, ৫.কথাবত্থু, ৬.যমক, ৭.পট্ঠান।
এই সাতটির মধ্যে প্রসিদ্ধ কথাবত্থুর মহত্তপূর্ণ রচনা অশোকের গুরু মোগ্গলিপুত্ত করেছেন। আত্মা কী, তার কোন পৃথক সত্তা আছে কিনা, নির্বাণের স্বরূপ কী, গৃহপতিও কি অর্হৎপদ প্রাপ্ত হতে পারে- এসকল বিষয় কথাবত্থুতে আলোচিত হয়েছে।
.
পালি ভাষায় রচিত এই ত্রিপিটক গ্রন্থগুলি বুদ্ধের মুখনিঃসৃত বচনরূপে সঙ্কলিত হলেও বুদ্ধের জীবদ্দশায় লিখিত হয় নি। বুদ্ধের অনুসারীদের মুখে মুখে তা সংরক্ষিত হয়ে বুদ্ধের পরিনির্বাণের বহুকাল পরে লিখিত আকারে সঙ্কলিত হয়েছে। তবে ত্রিপিটকের অনেকগুলো ভাগ বুদ্ধের নির্বাণের এক শতাব্দি পর বৌদ্ধধর্মের দ্বিতীয় ধর্মসঙ্গীতিকালে সঙ্কলিত হয়েছে বলে জানা যায়। আর ত্রিপিটকের কথাবত্থু প্রভৃতি অংশের রচনা অশোকের সময়ে (২৬৯-২৩২ খ্রীষ্টপূর্ব) হয়েছে।
এছাড়া বৌদ্ধসাহিত্যে ত্রিপিটক বহির্ভূত কিছু প্রসিদ্ধ পালিগ্রন্থ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো খ্রীষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকে উত্তর-পশ্চিম ভারতে রচিত ‘মিলিন্দ পনহো’। বৌদ্ধ দার্শনিক নাগসেনের (১৫০খ্রীষ্টপূর্ব) সাথে শিয়ালকোটের গ্রিক রাজা ও দার্শনিক মিনান্দরের (মিলিন্দ) দার্শনিক বিতর্কের আকর্ষণীয় বর্ণনা অন্তর্ক্তুক্ত রয়েছে। চতুর্থ খ্রীস্টাব্দে মগধনিবাসী বুদ্ধঘোষ রচিত পালিভাষায় ত্রিপিটকের ভাষ্য বা ব্যাখ্যারূপে ‘অট্ঠকথা’। তিনি পববর্তীকালে সিংহলদেশে (শ্রীলঙ্কা) গিয়ে এটি রচনা করেন, কিন্তু ত্রিপিটকভাষ্য শেষ করে যেতে পারেন নি। অবশিষ্ট কাজ সম্পূর্ণ করেন বুদ্ধদত্ত, ধম্মপাল, মহানাম, নবমোগ্গলান ও চুল্লঘোষ নামক আচার্যগণ। তবে বুদ্ধঘোষের সবচেয়ে মহত্ত্বপূর্ণ রচনা হচ্ছে ‘বিসুদ্দমগ্গ’ (বিশুদ্ধমার্গ), যা বৌদ্ধদর্শনের অত্যন্ত প্রামাণিক সিদ্ধান্তগ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত হয়।
0 comments:
Post a Comment