Sunday, June 15, 2014

0 ১০ম আন্তর্জাতিক ত্রিপিটক পাঠ সম্মেলন ২০১৪ ইং

১০ম আন্তর্জাতিক ত্রিপিটক পাঠ সম্মেলন ০২-১২ ডিসেম্বর, ২০১৪ ইং
ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ

বিশ্ব বৌদ্ধদের পূত-পবিত্র পূণ্যভূমি মহাতীর্থ ভারতের বুদ্ধগয়ার বোধি বৃক্ষ চত্বরে ১০ দিন ব্যাপী ১০ম আন্তর্জাতিক ত্রিপিটক পাঠ সম্মেলন আগামী ২ ডিসেম্বর, ২০১৪ থেকে শুরু হতে যাচ্ছে। ১০ দিনের এই ত্রিপিটক পাঠ সম্মেলন ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৪ সমাপ্ত হবে। উক্ত সম্মেলনের আয়োজক ইন্টারন্যাশনাল ত্রিপিটক চান্টিং কাউন্সিল (প্রতিষ্ঠা ২০০৬, ২৫৫০ বুদ্ধাব্দ) -এর সূত্র মতে, এবারের সম্মলনে বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া, ভারত, ভিয়েতনাম, লাওস, মায়ানমার, নেপাল, শ্রীলংকা এবং থাইল্যান্ড এ ৯ টি দেশ হতে মহান ভিক্খু উপস্থিত থাকবেন। এছাড়াও, উক্ত সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ হতে বিশিষ্ট প্রবীণ ভিক্খুসংঘ এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থাকবেন।

উল্লেখ্য, এবারের ত্রিপিটক পাঠ সম্মেলন কম্বোডিয়ান ভিক্ষুসংঘের প্রধানত্বে পরিচালিত হবে। ১০ দিনের এই মহাপূণ্যময় ত্রিপিটক পাঠ শেষে ১০০ জন পূজনীয় ভিক্ষু ও ১০০ জন উপাসকবৃন্দের একটি দল মহাবোধি বৃক্ষকে সম্মান প্রদর্শন পূর্বক ১৩ কিলোমিটারের এক ঐতিহাসিক পদব্রজে অংশগ্রহণ করবেন।

জগতের সকল প্রাণী সুখী হউক।
• তথ্যসূত্র:- https://www.facebook.com/AllBuddhist

Sunday, June 8, 2014

1 হাজার বছরের বৃদ্ধ এক বৃক্ষের কথা

২ মার্চ ২০০৩-এর আনন্দবাজার পত্রিকার ভিতরের পাতায় বুদ্ধগয়ার বোধিবৃক্ষকে রক্ষার জন্য সংবাদ শিরোনামটা ছিল, ‘বোধিবৃক্ষ রক্ষা করতে ডাক পেলেন বিশেষজ্ঞরা’। সেই সংবাদের ভিত্তিতে শিবশংকর ভারতী নিবন্ধটি রচনা করেছিলেন। যার সংকলন আকারে কিছু অংশ দৈনিক প্রথম আলো ৮ আগষ্ট ২০০৩ সংখ্যায় প্রকাশ করে। রাজগুরু বিজয়ানন্দ মহাথের অন্ত্যেষ্টিকিয়া স্বারক নভেম্বর, ২০০৭ ও অনলাইন তথ্য অবলম্বনে ধম্মইনফো-তে পুণঃ প্রকাশ করা হলো। -সম্পাদক।
 রাজকুমার সিদ্ধার্থ গৃহত্যাগ করেছিলেন প্রায় ২৯ বৎসর বয়সে। কপিলাবস্তু থেকে মহাভারতীয় যুগের গিরিব্রজ (রাজগীর) হয়ে গিয়েছিলেন গয়ের নগরীতে (গয়া)। তারপর উরুবিল্ব (বুদ্ধগয়া) গ্রামে নৈরঞ্জনা (ফল্গু) নদীতীরে মগ্ন হয়েছিলেন তপস্যায়। ছ’বছর কঠিন তপস্যার পর বোধিলাভ করলেন তিনি। তখন তাঁর বয়স হয়েছিল পঁয়ত্রিশ।  বুদ্ধের সাধনা ও বোধিলাভের স্থান হিসাবে বুদ্ধগয়া এবং বোধিবৃক্ষের কথা আজ আর কারও অজানা নেই। পণ্ডিতদের অনুমান,দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের আমলে ভারতে এসেছিলেন চিনা পরিব্রাজক ফা-হিয়েন। ৪০০-৪১১, মতান্তরে ৪০৫-৪১১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি ভারতে ছিলেন। বুদ্ধগয়ার মতো পুণ্য ভূমিতে বুদ্ধদেবের লীলার স্থানগুলিতে সংঘারাম, স্তূপ ইত্যাদি নানা বিষয় দেখে তিনি লিখেছিলেন তাঁর ভ্রমণ বৃত্তান্ত ‘ফো-কো-কি’ নামক গ্রন্থ।  গয়ার বোধিবৃক্ষ। ছবি: ধম্মইনফো  বিল সাহেবের ফা-হিয়েনের ভ্রমণ বৃত্তান্তের ইংরেজি অনুবাদ গ্রন্থের ৩১ অধ্যায়ে ফা-হিয়েন বুদ্ধের সাধনক্ষেত্র এবং বোধিবৃক্ষ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘পশ্চিমদিকে ৪ যোজন গমনের পর আমরা গয়ানগরে উপস্থিত হইলাম। এখানেও নগরটি জনশূন্য ও পরিত্যক্ত। দক্ষিণে ২০ ‘লি’ (সাড়ে ৪ লি-তে ১.০১ মাইল) যাইয়া যে স্থানে বোধিসত্ত্ব ছয় বৎসর ধরিয়া তপস্যা করিয়াছিলেন সেই স্থানে আমরা উপস্থিত হইলাম। এই স্থানটি এখন জঙ্গলাকীর্ণ। এই স্থানের ৩ লি পশ্চিমে আমরা উপস্থিত হইলাম, যেখানে বুদ্ধ স্নান করিবার জন্য নদীতে নামিতেন।  এখান হইতে ২ লি উত্তরে এক বৃক্ষতলে যে স্থানে বুদ্ধদেব পাষাণের উপর বসিয়া পূর্বদিকে চক্ষু নিবদ্ধ রাখিয়া দুগ্ধ ও অন্ন ভক্ষণ করিয়াছিলেন সেই স্থান অবস্থিত। আজও সেই বৃক্ষ ও প্রস্তর সেই স্থানেই অবস্থিত। পাথরটি প্রায় ছয় ফুট চৌকো এবং দুই ফুট উচ্চ। মধ্য ভারতে জলবায়ু এমনই সমতা-বিশিষ্ট নাতিশীতোষ্ণ যে এই স্থানে গাছ হাজার হাজার বৎসর বাঁচিয়া থাকে।...’  পঞ্চম শতাব্দে ফা-হিয়েনের দেখা বোধিবৃক্ষটি যে ছোট ছিল না তা তাঁর কথাতেই বোঝা যায়, ‘...বর্তমানে সেই বৃক্ষই তার শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে একটি বিস্তীর্ণ অঞ্চল নিজের ছায়াতলে ঢেকে রেখেছে। রাজা অশোক এই বৃক্ষের ধারে সুউচ্চ একটি প্রাচীর গেঁথে দেন যাতে কেউ এর কোনওরূপ ক্ষতি করতে না পারে।’ (ফা-হিয়েনের দেখা ভারত)  সারনাথের ঐতিহাসিক বোধিবৃক্ষ। সূত্র: outreachecology.com  হিউয়েন সাঙ ৬২৯ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বরে চিন থেকে যাত্রা শুরু করে ভারত সীমানায় পদার্পণ করেন ৬৩০ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বরে। তারপর অধ্যয়ন ও ভ্রমণ করতে করতে ৬৩৭ খ্রিস্টাব্দে আসেন মগধে ও নালন্দা বিহারে। সম্ভবত ওই সময়েই তিনি এসেছিলেন বুদ্ধগয়ায়। হিউয়েন সাঙ তাঁর ভারত ভ্রমণ গ্রন্থে (সি-ইউ-কাই) সুন্দর একটি চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন বোধিবৃক্ষ প্রসঙ্গে। হিউয়েন সাঙ লিখেছেন,“বজ্রাসনের উপরের বোধিবৃক্ষটি একটি অশ্বত্থ গাছ (পিপল)। পুরাকালে বুদ্ধের সময়ে গাছটি কয়েকশো ফুট উঁচু ছিল। তারপর একে প্রায়ই কেটে ফেলা হয়েছে। তা সত্ত্বেও এখনও এটি ৪০ থেকে ৫০ ফুট উঁচু। বুদ্ধ এর নীচে বসে সম্যক সম্বোধি বা যথার্থ জ্ঞান লাভ করেন বলে একে জ্ঞানের বৃক্ষ বা বোধিবৃক্ষ বলা হয়। এ গাছের বাকল হলদেটে-সাদা, পাতা গাঢ় সবুজ রঙের। কি শীত কি গ্রীষ্ম কোনও ঋতুতেই এর পাতা ঝরে না। সব সময় সেগুলি তেলতেলে চিকণ। কখনও কোনও হেরফের নেই। কিন্তু প্রত্যেক বছর বুদ্ধের নির্বাণ তারিখটি এলে পাতাগুলি হলদে হয়ে ঝরে পড়ে ও মুহূর্তের মধ্যে আবার নতুন পাতা গজিয়ে ওঠে ও আগের চেহারা ফিরে পায়। এই দিনটিতে বিভিন্ন দেশের রাজারা ও অসংখ্য ধর্মানুরাগী চারদিক থেকে কাতারে কাতারে এসে এখানে জমা হন। বোধিবৃক্ষের পাদদেশ সুগন্ধি জল ও সুরভিত দুধ দিয়ে ধুইয়ে দেওয়া হয়। সবাই স্তবগান করে ফুল ছড়ায়, সুগন্ধি ধূপধূনা জ্বালায়। রাতে মশালের আলোয় জায়গাটি আলোকিত হয়ে ওঠে। নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠান-সহ পূজা ও উপহার নিবেদন করা হয়।’...  বুদ্ধত্ব লাভের পর ভগবান বুদ্ধ কৃতজ্ঞ ছিলেন বোধিবৃক্ষের কাছে, যার নির্মল প্রশান্ত সুশীতল ছায়ায় কেটে গিয়েছিল সাধন জীবনের টানা ছ’টি বছর। পরিব্রাজকের কথায়, ‘...বুদ্ধ যেখানে পায়চারি করেন সেখান থেকে উত্তর রাস্তার বাঁদিকে একটি বড় পাথর আছে। এর উপরে একটি বুদ্ধের মূর্তি আছে। মূর্তিটি উপরের দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে রয়েছে। তথাগত বুদ্ধত্ব লাভের পর ৭ দিন ধরে বোধিবৃক্ষের দিকে ওই ভাবে চেয়ে থাকেন। এই সময় মধ্যে তিনি ক্ষণিকের জন্যও বোধিবৃক্ষ থেকে তাঁর দৃষ্টি সরিয়ে নেননি। এভাবে চেয়ে থেকে তিনি বোধিবৃক্ষকে তাঁর অন্তরের কৃতজ্ঞতা জানান।’...  শ্রীলংকার অনুরাধাপুরে অবস্থিত বোধিবৃক্ষ। ছবি: অনলাইন  রাজা অশোক মগধের সিংহাসনে বসেন ২৭৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে, বুদ্ধের দেহত্যাগের ২১৪ বছর পরে। অশোকের মানসিক পরিবর্তনের আগে বোধিবৃক্ষটিকে ধ্বংস করার জন্য সচেষ্ট হলেও তা পরিব্রাজকের কথায়, ‘গাছটি ঠিক আগের মতোই তার জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। রাজা সে দৃশ্য দেখে এত অভিভূত হয়ে পড়লেন যে নিজেই তাকে পূজার্ঘ্য নিবেদন করে চললেন।’  এরপর শৈব রাজা শশাঙ্ক বৌদ্ধধর্মের প্রতিপত্তি নাশের জন্য উঠে পড়ে লাগলেন। তিনিও বোধিবৃক্ষটি কেটে দিলেন ক্রোধবশত। কিন্তু সে বারও বৃক্ষটি রক্ষা পায়। হিউয়েন সাঙের কথায়, ‘রাজা অশোকের শেষ বংশধর মগধরাজ পূণবর্মা এ খবর শুনে দুঃখ পেলেন। কয়েক মাস পরে তিনি গাছের শিকড়গুলিতে এক হাজার গরুর দুধ ঢাললেন।...গাছটি আবার গজিয়ে ১০ ফুটের মতো লম্বা হয়ে গেল। পাছে আবার কেটে ফেলা হয় সেই ভয়ে তিনি তার চারদিকে ২৪ ফুট উঁচু পাথরের দেওয়াল তুলে দিলেন। গাছটি এখন ২০ ফুট উঁচু দেওয়াল দিয়ে ঘেরা।’  রাজা অশোক তাঁর রাজত্বকালেই বোধিবৃক্ষের একটি শাখা কেটে তাঁর প্রিয় কন্যা ভিক্ষুণী সঙ্ঘমিত্রাকে দিয়ে পাঠালেন সিংহলে। এর প্রাচীন রাজধানী অনুরাধাপুরে রোপিত হল বোধিবৃক্ষের শাখা। অসংখ্য শাখা-প্রশাখায় সে বৃক্ষ বেড়ে উঠল ধীরে ধীরে।  ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দের কথা। বৌদ্ধধর্ম প্রসারের প্রচেষ্টায় মহাবোধি সোসাইটি স্থাপন করলেন আচার্য অনাগারিক ধর্মপাল। তিনি অনুরাধাপুর বিহার থেকে বোধিবৃক্ষের একটি শাখা কেটে আনেন সারনাথে। রোপণ করেন মূলগন্ধকুটি বিহারের পূর্ব প্রাঙ্গণে। সেই বৃক্ষটি আজ বেশ বড় আকার ধারণ করেছে। বুদ্ধগয়ার বোধিবৃক্ষটি এক বার প্রবল ঝড়ে উৎপাটিত হয় ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে। পরে একই জায়গায় রোপণ করা হয় বৃক্ষটিকে।  ১৬ মে ১৯২৭—১ ডিসেম্বর ১৯২৮, এই উনিশ মাস লঙ্কাতে ছিলেন রাহুল সাংকৃত্যায়ন। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে তিনিও দেখেছিলেন বোধিবৃক্ষটি। ‘আমার জীবন যাত্রা’ গ্রন্থে এক জায়গায় লিখেছেন, ‘...অনুরাধাপুর হল লঙ্কার পুরনো রাজধানী। এখান থেকেই লঙ্কার ইতিহাস শুরু হয়েছে এবং বৌদ্ধধর্মেরও। প্রথম বৌদ্ধধর্ম প্রচারক অশোকপুত্র খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে এখানেই ধর্মের পতাকা পুঁতেছিলেন।...আমরা এ-দিক ও-দিক ঘুরতে ঘুরতে বোধিবৃক্ষের নীচে পৌঁছলাম। ওখানে কয়েকশো বৈদ্যুতিক আলো জ্বলছিল। অশোক কন্যা ভিক্ষুণী সঙ্ঘমিত্রা বুদ্ধগয়ার অশ্বত্থ গাছের একটি শাখা নিয়ে এসেছিলেন, এটি সেই ঐতিহাসিক বৃক্ষ—এই বলে রাজেন্দ্রবাবুকে আমি গাছটির বৈশিষ্ট্যের কথা জানালাম। তাতে তিনি বললেন, ‘এই শাখা বুদ্ধগয়ার অশ্বত্থগাছের, যার জন্য বিশেষ উপায়ে ইঞ্জিন রেখে বৈদ্যুতিক আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর আমাদের ওখানে মূল বোধিবৃক্ষটির যে কি কদর সে আমরা জানি।  হাজার হাজার বছর ধরে রোদ, ঝড়, জল উপেক্ষা আর মানুষের অত্যাচার সহ্য করে বুদ্ধগয়া, অনুরাধাপুর, সারনাথ এবং সাঁচীতে চতুর্থ প্রজন্মের বোধিবৃক্ষ আজও দাঁড়িয়ে আছে কালের সাক্ষী হয়ে, থাকবে অনাগত ভবিষ্যতেও, ভগবান বুদ্ধকে স্মরণ করে।

- See more at: http://dhammainfo.com
২ মার্চ ২০০৩-এর আনন্দবাজার পত্রিকার ভিতরের পাতায় বুদ্ধগয়ার বোধিবৃক্ষকে রক্ষার জন্য সংবাদ শিরোনামটা ছিল, বোধিবৃক্ষ রক্ষা করতে ডাক পেলেন বিশেষজ্ঞরা। সেই সংবাদের ভিত্তিতে শিবশংকর ভারতী নিবন্ধটি রচনা করেছিলেন। যার সংকলন আকারে কিছু অংশ দৈনিক প্রথম আলো ৮ আগষ্ট ২০০৩ সংখ্যায় প্রকাশ করে। রাজগুরু বিজয়ানন্দ মহাথের অন্ত্যেষ্টিকিয়া স্বারক নভেম্বর, ২০০৭ ও অনলাইন তথ্য অবলম্বনে ধম্মইনফো-তে পুণঃ প্রকাশ করা হলো। -সম্পাদক।
রাজকুমার সিদ্ধার্থ গৃহত্যাগ করেছিলেন প্রায় ২৯ বৎসর বয়সে। কপিলাবস্তু থেকে মহাভারতীয় যুগের গিরিব্রজ (রাজগীর) হয়ে গিয়েছিলেন গয়ের নগরীতে (গয়া)। তারপর উরুবিল্ব (বুদ্ধগয়া) গ্রামে নৈরঞ্জনা (ফল্গু) নদীতীরে মগ্ন হয়েছিলেন তপস্যায়। ছবছর কঠিন তপস্যার পর বোধিলাভ করলেন তিনি। তখন তাঁর বয়স হয়েছিল পঁয়ত্রিশ।
বুদ্ধের সাধনা ও বোধিলাভের স্থান হিসাবে বুদ্ধগয়া এবং বোধিবৃক্ষের কথা আজ আর কারও অজানা নেই। পণ্ডিতদের অনুমান,দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের আমলে ভারতে এসেছিলেন চিনা পরিব্রাজক ফা-হিয়েন। ৪০০-৪১১, মতান্তরে ৪০৫-৪১১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি ভারতে ছিলেন। বুদ্ধগয়ার মতো পুণ্য ভূমিতে বুদ্ধদেবের লীলার স্থানগুলিতে সংঘারাম, স্তূপ ইত্যাদি নানা বিষয় দেখে তিনি লিখেছিলেন তাঁর ভ্রমণ বৃত্তান্ত ফো-কো-কি নামক গ্রন্থ।
গয়ার বোধিবৃক্ষ। ছবি: ধম্মইনফো
বিল সাহেবের ফা-হিয়েনের ভ্রমণ বৃত্তান্তের ইংরেজি অনুবাদ গ্রন্থের ৩১ অধ্যায়ে ফা-হিয়েন বুদ্ধের সাধনক্ষেত্র এবং বোধিবৃক্ষ প্রসঙ্গে বলেছেন, পশ্চিমদিকে ৪ যোজন গমনের পর আমরা গয়ানগরে উপস্থিত হইলাম। এখানেও নগরটি জনশূন্য ও পরিত্যক্ত। দক্ষিণে ২০ লি (সাড়ে ৪ লি-তে ১.০১ মাইল) যাইয়া যে স্থানে বোধিসত্ত্ব ছয় বৎসর ধরিয়া তপস্যা করিয়াছিলেন সেই স্থানে আমরা উপস্থিত হইলাম। এই স্থানটি এখন জঙ্গলাকীর্ণ। এই স্থানের ৩ লি পশ্চিমে আমরা উপস্থিত হইলাম, যেখানে বুদ্ধ স্নান করিবার জন্য নদীতে নামিতেন।
এখান হইতে ২ লি উত্তরে এক বৃক্ষতলে যে স্থানে বুদ্ধদেব পাষাণের উপর বসিয়া পূর্বদিকে চক্ষু নিবদ্ধ রাখিয়া দুগ্ধ ও অন্ন ভক্ষণ করিয়াছিলেন সেই স্থান অবস্থিত। আজও সেই বৃক্ষ ও প্রস্তর সেই স্থানেই অবস্থিত। পাথরটি প্রায় ছয় ফুট চৌকো এবং দুই ফুট উচ্চ। মধ্য ভারতে জলবায়ু এমনই সমতা-বিশিষ্ট নাতিশীতোষ্ণ যে এই স্থানে গাছ হাজার হাজার বৎসর বাঁচিয়া থাকে।...
পঞ্চম শতাব্দে ফা-হিয়েনের দেখা বোধিবৃক্ষটি যে ছোট ছিল না তা তাঁর কথাতেই বোঝা যায়, ...বর্তমানে সেই বৃক্ষই তার শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে একটি বিস্তীর্ণ অঞ্চল নিজের ছায়াতলে ঢেকে রেখেছে। রাজা অশোক এই বৃক্ষের ধারে সুউচ্চ একটি প্রাচীর গেঁথে দেন যাতে কেউ এর কোনওরূপ ক্ষতি করতে না পারে। (ফা-হিয়েনের দেখা ভারত)
সারনাথের ঐতিহাসিক বোধিবৃক্ষ। সূত্র: outreachecology.com
হিউয়েন সাঙ ৬২৯ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বরে চিন থেকে যাত্রা শুরু করে ভারত সীমানায় পদার্পণ করেন ৬৩০ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বরে। তারপর অধ্যয়ন ও ভ্রমণ করতে করতে ৬৩৭ খ্রিস্টাব্দে আসেন মগধে ও নালন্দা বিহারে। সম্ভবত ওই সময়েই তিনি এসেছিলেন বুদ্ধগয়ায়। হিউয়েন সাঙ তাঁর ভারত ভ্রমণ গ্রন্থে (সি-ইউ-কাই) সুন্দর একটি চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন বোধিবৃক্ষ প্রসঙ্গে। হিউয়েন সাঙ লিখেছেন,বজ্রাসনের উপরের বোধিবৃক্ষটি একটি অশ্বত্থ গাছ (পিপল)। পুরাকালে বুদ্ধের সময়ে গাছটি কয়েকশো ফুট উঁচু ছিল। তারপর একে প্রায়ই কেটে ফেলা হয়েছে। তা সত্ত্বেও এখনও এটি ৪০ থেকে ৫০ ফুট উঁচু। বুদ্ধ এর নীচে বসে সম্যক সম্বোধি বা যথার্থ জ্ঞান লাভ করেন বলে একে জ্ঞানের বৃক্ষ বা বোধিবৃক্ষ বলা হয়। এ গাছের বাকল হলদেটে-সাদা, পাতা গাঢ় সবুজ রঙের। কি শীত কি গ্রীষ্ম কোনও ঋতুতেই এর পাতা ঝরে না। সব সময় সেগুলি তেলতেলে চিকণ। কখনও কোনও হেরফের নেই। কিন্তু প্রত্যেক বছর বুদ্ধের নির্বাণ তারিখটি এলে পাতাগুলি হলদে হয়ে ঝরে পড়ে ও মুহূর্তের মধ্যে আবার নতুন পাতা গজিয়ে ওঠে ও আগের চেহারা ফিরে পায়। এই দিনটিতে বিভিন্ন দেশের রাজারা ও অসংখ্য ধর্মানুরাগী চারদিক থেকে কাতারে কাতারে এসে এখানে জমা হন। বোধিবৃক্ষের পাদদেশ সুগন্ধি জল ও সুরভিত দুধ দিয়ে ধুইয়ে দেওয়া হয়। সবাই স্তবগান করে ফুল ছড়ায়, সুগন্ধি ধূপধূনা জ্বালায়। রাতে মশালের আলোয় জায়গাটি আলোকিত হয়ে ওঠে। নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠান-সহ পূজা ও উপহার নিবেদন করা হয়।...
বুদ্ধত্ব লাভের পর ভগবান বুদ্ধ কৃতজ্ঞ ছিলেন বোধিবৃক্ষের কাছে, যার নির্মল প্রশান্ত সুশীতল ছায়ায় কেটে গিয়েছিল সাধন জীবনের টানা ছ’টি বছর। পরিব্রাজকের কথায়, ‘...বুদ্ধ যেখানে পায়চারি করেন সেখান থেকে উত্তর রাস্তার বাঁদিকে একটি বড় পাথর আছে। এর উপরে একটি বুদ্ধের মূর্তি আছে। মূর্তিটি উপরের দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে রয়েছে। তথাগত বুদ্ধত্ব লাভের পর ৭ দিন ধরে বোধিবৃক্ষের দিকে ওই ভাবে চেয়ে থাকেন। এই সময় মধ্যে তিনি ক্ষণিকের জন্যও বোধিবৃক্ষ থেকে তাঁর দৃষ্টি সরিয়ে নেননি। এভাবে চেয়ে থেকে তিনি বোধিবৃক্ষকে তাঁর অন্তরের কৃতজ্ঞতা জানান।’...
শ্রীলংকার অনুরাধাপুরে অবস্থিত বোধিবৃক্ষ। ছবি: অনলাইন
রাজা অশোক মগধের সিংহাসনে বসেন ২৭৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে, বুদ্ধের দেহত্যাগের ২১৪ বছর পরে। অশোকের মানসিক পরিবর্তনের আগে বোধিবৃক্ষটিকে ধ্বংস করার জন্য সচেষ্ট হলেও তা পরিব্রাজকের কথায়, ‘গাছটি ঠিক আগের মতোই তার জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। রাজা সে দৃশ্য দেখে এত অভিভূত হয়ে পড়লেন যে নিজেই তাকে পূজার্ঘ্য নিবেদন করে চললেন।’
এরপর শৈব রাজা শশাঙ্ক বৌদ্ধধর্মের প্রতিপত্তি নাশের জন্য উঠে পড়ে লাগলেন। তিনিও বোধিবৃক্ষটি কেটে দিলেন ক্রোধবশত। কিন্তু সে বারও বৃক্ষটি রক্ষা পায়। হিউয়েন সাঙের কথায়, ‘রাজা অশোকের শেষ বংশধর মগধরাজ পূণবর্মা এ খবর শুনে দুঃখ পেলেন। কয়েক মাস পরে তিনি গাছের শিকড়গুলিতে এক হাজার গরুর দুধ ঢাললেন।...গাছটি আবার গজিয়ে ১০ ফুটের মতো লম্বা হয়ে গেল। পাছে আবার কেটে ফেলা হয় সেই ভয়ে তিনি তার চারদিকে ২৪ ফুট উঁচু পাথরের দেওয়াল তুলে দিলেন। গাছটি এখন ২০ ফুট উঁচু দেওয়াল দিয়ে ঘেরা।’
রাজা অশোক তাঁর রাজত্বকালেই বোধিবৃক্ষের একটি শাখা কেটে তাঁর প্রিয় কন্যা ভিক্ষুণী সঙ্ঘমিত্রাকে দিয়ে পাঠালেন সিংহলে। এর প্রাচীন রাজধানী অনুরাধাপুরে রোপিত হল বোধিবৃক্ষের শাখা। অসংখ্য শাখা-প্রশাখায় সে বৃক্ষ বেড়ে উঠল ধীরে ধীরে।
১৮৯২ খ্রিস্টাব্দের কথা। বৌদ্ধধর্ম প্রসারের প্রচেষ্টায় মহাবোধি সোসাইটি স্থাপন করলেন আচার্য অনাগারিক ধর্মপাল। তিনি অনুরাধাপুর বিহার থেকে বোধিবৃক্ষের একটি শাখা কেটে আনেন সারনাথে। রোপণ করেন মূলগন্ধকুটি বিহারের পূর্ব প্রাঙ্গণে। সেই বৃক্ষটি আজ বেশ বড় আকার ধারণ করেছে। বুদ্ধগয়ার বোধিবৃক্ষটি এক বার প্রবল ঝড়ে উৎপাটিত হয় ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে। পরে একই জায়গায় রোপণ করা হয় বৃক্ষটিকে।
১৬ মে ১৯২৭—১ ডিসেম্বর ১৯২৮, এই উনিশ মাস লঙ্কাতে ছিলেন রাহুল সাংকৃত্যায়ন। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে তিনিও দেখেছিলেন বোধিবৃক্ষটি। ‘আমার জীবন যাত্রা’ গ্রন্থে এক জায়গায় লিখেছেন, ‘...অনুরাধাপুর হল লঙ্কার পুরনো রাজধানী। এখান থেকেই লঙ্কার ইতিহাস শুরু হয়েছে এবং বৌদ্ধধর্মেরও। প্রথম বৌদ্ধধর্ম প্রচারক অশোকপুত্র খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে এখানেই ধর্মের পতাকা পুঁতেছিলেন।...আমরা এ-দিক ও-দিক ঘুরতে ঘুরতে বোধিবৃক্ষের নীচে পৌঁছলাম। ওখানে কয়েকশো বৈদ্যুতিক আলো জ্বলছিল। অশোক কন্যা ভিক্ষুণী সঙ্ঘমিত্রা বুদ্ধগয়ার অশ্বত্থ গাছের একটি শাখা নিয়ে এসেছিলেন, এটি সেই ঐতিহাসিক বৃক্ষ—এই বলে রাজেন্দ্রবাবুকে আমি গাছটির বৈশিষ্ট্যের কথা জানালাম। তাতে তিনি বললেন, ‘এই শাখা বুদ্ধগয়ার অশ্বত্থগাছের, যার জন্য বিশেষ উপায়ে ইঞ্জিন রেখে বৈদ্যুতিক আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর আমাদের ওখানে মূল বোধিবৃক্ষটির যে কি কদর সে আমরা জানি।
হাজার হাজার বছর ধরে রোদ, ঝড়, জল উপেক্ষা আর মানুষের অত্যাচার সহ্য করে বুদ্ধগয়া, অনুরাধাপুর, সারনাথ এবং সাঁচীতে চতুর্থ প্রজন্মের বোধিবৃক্ষ আজও দাঁড়িয়ে আছে কালের সাক্ষী হয়ে, থাকবে অনাগত ভবিষ্যতেও, ভগবান বুদ্ধকে স্মরণ করে।
- See more at: http://dhammainfo.com/heritage/india/1459#sthash.GzgPMRUb.dpuf

Thursday, June 5, 2014

0 ✔ বুদ্ধের দীক্ষা নিচ্ছেন শাহরুখ!

চঞ্চল শাহরুখের সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে নিজেকে শান্ত রাখা। কারণ সপ্তম আইপিএল জয় এবং সংবর্ধনা, নতুন ছবি ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’র শ্যুটিং নিয়ে ব্যস্ততা, সবমিলিয়ে ৪৮ বছর বয়সেও উন্মাদনার তুঙ্গে বলিউড বাদশা কিং খান।

শাহরুখ নিজেই টুইট করে জানিয়ে ছিলেন, আইপিএলের ফাইনাল চলাকালীন নিজের
উদ্বেগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছিলেন না বলে মুহূর্মুহূ টুইট করছিলেন তিনি। তার আঙুল সেদিন থামতেই চায়নি।

এছাড়া বাদশাকে সবাই চেন স্মোকার বলেই চেনে। নিজের উদ্বেগ কমাতেই নাকি এতো বেশি সিগেরেট খান। তবে এবার নিজেকে শান্ত রাখার জন্য অন্য পন্থা নিয়েছেন কিং খান। তিনি এখন গৌতম বুদ্ধের দীক্ষা নিতে তার জীবনী নিয়ে অনেকটা সময়
কাটাচ্ছেন।

গৌতম বুদ্ধের জীবনী নিয়ে লেখা অনেকগুলো বই তিনি যোগার করেছেন। এমনকি এসব বই পড়াও শুরু করে দিয়েছেন এই ব্যস্ত অভিনেতা।

উৎস : বাংলামেইল২৪ডটকম।

Wednesday, June 4, 2014

0 ভিডিও


Sunday, June 1, 2014

1 ধম্মইনফো এবং নির্বাণা পিস ফাউন্ডেশনের

প্রিয় সুধী, ধম্মইনফো এবং নির্বাণা পিস ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে মৈত্রীময় শুভেচ্ছা গ্রহণ করবেন। সদ্ধর্মের সেবায় আমাদের ছোট্ট প্রয়াসে আশা করব আপনারা স্ববান্ধব উপস্থিত থকবেন।
আমাদের এ আয়োজন সম্পুর্ণ ভিন্নধর্মী হবে আশা করি। আমাদের এ আয়োজনে শুধু বক্তা তার বক্তব্য উপস্থাপন করবে এমনটা না। এখানে সবার মনের অনুভূতি প্রকাশের আহ্বান করা হচ্ছে।
আমাদের এবারের বিষয় “বৌদ্ধিক চেতনায় দৈনন্দিক জীবন ধারা”। এ বিষয়ে শুধু সম্মানিত ধর্মদেশক/আলোচক মন্ডলীর বক্তব্য শুনবেন তা না। এ সর্ম্পকে আপনার যদি কোন কিছু জানার থাকে আপনি এখানে প্রশ্ন রাখতে পারবেন।
অনেক দিনের জমানো মনের প্রশ্ন সবার সাথে শেয়ার করে হয়তো আপনি সম্মানিত আলোচক বা উপস্থিত সুধী জনের থেকে উত্তর পেতে পারেন।
চট্টগ্রাম শহরে অবস্থানরত সবাই স্ববান্ধব, পরিবার, পরিজন নিয়ে অংশ গ্রহণ করুন।
বৌদ্ধধর্ম সর্ম্পকে জানতে আমাদের এ আয়োজন আশা করি সবার ভাল লাগবে।
আমন্ত্রণসহ ধন্যবাদ সবাইকে.....

তথ্য....
https://www.facebook.com/Dhammainfo

Thursday, May 22, 2014

0 একজন বোনকে বাঁচাতে এগিয়ে আসার আহব্বান

একজন বোনকে বাঁচাতে এগিয়ে আসার আহব্বান
এবং দেশী/প্রবাসীদের ভাই বোনদের
দৃষ্টি আকর্ষণ করছি ::
[দয়াকরে পোস্টটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন]
নাম তিথি চাকমা।
দীঘিনালা কলেজে ডিগ্রী পড়ুয়া ছাত্রী।
পিতার নামঃ তরুন কান্তি চাকমা,
মাতার নামঃ মমতা চাকমা।
বাবা একজন কৃষক।
গ্রামঃ দিঘীনালা উপজেলায় উঃ পুকুর ঘাট গ্রামে।
তিথি গত ৫/৬দিন ধরে অজ্ঞান অবস্থায়
চিকিৎসাধীন আছে। হাসপাতালের ডাঃ দের
কথা মতে সে নাকি ব্রেইন ইনফেকশন
এবং নিউমোনিয়ার আক্রান্ত এবং দীর্ঘদিন
চিকিৎসার প্রয়োজন। প্রথমে চট্টগ্রাম
শহরে GEC
মোড়ে একটি বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎধীন
ছিলো। অতি ব্য্যবহুল হওয়ার আগ্রাবাদ, মা ও
শিশু হাসপাতালে স্থানান্তর করা হই।
বর্তমানে মা ও শিশু হাসপাতালে ICU তে লাইফ
সাপোর্ট এ আছে। ICU, ভেন্টিলেটর সাপোর্ট
এবং ডাক্তারের খরচ সহ প্রতিদিন ২০ হাজার
টাকার উপরে খরচ হচ্ছে। পরিবারের সদস্যদের
সাথে কথা বলে জানা গেছে আর্থিক
টানাটানি সত্তেও এ যাবৎ প্রায় ৬/৭ লক্ষ
টাকা খরচ হয়ে গেছে। নিজের অতি আদরের
মেয়ে চিকিৎসার খরচ যোগাতে গরিব তিথির
বাবা অত্যান্ত অসহায় হয়ে পড়েছে।
আমরা কত টাকা কতভাবে অপচয় করে থাকি।
অন্তঃত সে অংশ থেকে কিছু সাহায্য
করলে একটি মানুষ পৃথিবী উপভোগ করার সুযোগ
পাবে। মুখে হাঁসি ফুটবে একটি বাবার
এবং একটি মমতাময়ী মার।
মহৎ ব্যক্তিদের কাছে আকুল আবেদন একজন
বোনকে সবাই বাঁচাতে এগিয়ে আসুন।
একটি কথা আছে,
ছোট ছোট বালু কণা বিন্দু বিন্দু জন
গড়ে তোলে মহাদেশ, সাগর অথল
আপনার- আমার সামান্য সহায়তা বৃহৎআকার
ধারন করে একটি জীবন বাঁচানো সম্ভব।
আর্থিক সহায়তার জন্যঃ
--------------------------------------
ব্যাংক একাউন্ট
Payee Name: Jagat Jyoti Chakma
(তিথির কাকা)
Account No: 141.101.233812
Duch Bangla Bank Ltd (DBBL)
Comilla Branch, , Comilla.
বিকাশ(bkash-Personal ): 01723-736751
(তিথির ভাই- প্রিভেল চাকমা-)
দেশের বাইরে যারা আছেন "Jagat Jyoti
Chakma" নামে Western Union এ আর্থিক
সহায়তা পাঠাতে পারেন।
বিস্তারির জানতে ফোন
করতে পারেনঃ 01556-588952 (তিথির বাবা)

সুত্র:-https://www.facebook.com/AllBuddhist

Wednesday, April 30, 2014

0 বৌদ্ধধর্মে প্রতীত্যসমুৎপাদ

বৌদ্ধধর্মে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে প্রতীত্যসমুৎপাদ। এই প্রতীত্যসমুৎপাদ শব্দটির বিশ্লেষণ বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্নভাবে উক্ত হয়েছে- ক. প্রতীত্য+সম+উপ্পাদ = প্রতীত্যসমুৎপাদ, এক্ষেত্রে ‘প্রতীত্য’ শব্দের অর্থ কারণ যেটি ‘সম’ (যার অর্থ যথার্থ বা উপযুক্ত) এর উপর নির্ভর করে। আর ‘উপ্পাদ’ শব্দের অর্থ হচ্ছে উৎপাদিত বা সংগঠিত। এক্ষেত্রে প্রতীত্যসমুৎপাদ শব্দের অর্থ হচ্ছে কারণ দ্বারা সংগঠিত বা উৎপাদিত। খ. পটিচ্চ = কারণ, কারণ + সমুপ্পাদ = উৎপত্তির সংযোগ সূত্র, সমুপ্পন্ন = উৎপাদিত বা অস্তিত্বে আগমন। গ. প্রতীত্য + সমুৎপাদ = প্রতীত্যসমুৎপাদ, এখানে ‘প্রতীত্য’ অর্থ কার্যকারণ বশতঃ এবং ‘সমুৎপাদ’ শব্দের অর্থ উৎপত্তি। মূলতঃ পালি ‘পটিচ্চসমুপ্পাদ’ শব্দকে বাংলায় প্রতীত্যসমুৎপাদ বলা হয়। সংক্ষেপে প্রতীত্যসমুৎপাদ শব্দের অর্থ কারণজনক উৎপত্তি। মধ্যম নিকায়ের ঔপম্যবর্গের আর্য্যপর্য্যষেণ সূত্রে উল্লেখ আছে- সিদ্ধার্থ গৌতম ২৯ বছর বয়সে গৃহত্যাগ করে মুক্তির পথ অন্বেষণে পর্যায়ক্রমে আরাড় কালাম, রুদ্র রামপুত্র প্রমুখ তৎকালীন বড় বড় মনীষীদের কাছে দুঃখ মুক্তির যথার্থ পথ না পেয়ে দীর্ঘ ছয় বছর ধরে নিজেই কঠোর তপস্যা করলেন।
সাধনার সমাপনান্তে তিনি গভীর দুদ্দর্শ, দুরনুবোধ্য, শান্ত, প্রণীত, তর্কাতীত, নিপুণ, পন্ডিত বেদনীয় ধর্মের দুই তত্ত্ব আয়ত্ব করেছিলেন। ১. হেতুপ্রত্যয়তা প্রতীত্যসমুৎপাদ ২. সর্বসংস্কার শমথ, সর্বউপাধি-পরিবর্জিত, তৃষ্ণাক্ষয় বিরাগ ও নিরোধ(নামধেয়) নির্বাণ। হেতু প্রত্যয়তা অর্থে কারণবশত। আবার, মধ্যম নিকায়ের মহাযমক বর্গের মহা তৃষ্ণাসংক্ষয় সূত্রানুসারে- ‘ইমস্মিং সতি ইদং হোতি, ইমস্সুপ্পাদা ইদং উপ্পজ্জতি, ইমস্মিং অসতি ইদং ন হোতি, ইমস্স নিরোধা ইদং নিরুজ্ঝতি।’ অর্থাৎ, উহা থাকলে ইহা হয়, উহার উৎপত্তিতে ইহার উৎপত্তি হয়। উহা না থাকলে ইহা হয়না, উহার নিরোধে ইহার নিরোধ হয়। বিস্তৃতার্থে- অবিদ্যা হেতু সংস্কার, সংস্কার হেতু বিজ্ঞান, বিজ্ঞান হেতু নাম-রূপ, নাম-রূপ হেতু ষড়ায়তন, ষড়ায়তন হেতু স্পর্শ, স্পর্শের হেতু বেদনা, বেদনা হেতু তৃষ্ণা, তৃষ্ণা হেতু উপাদান, উপাদান হেতু ভব, ভব হেতু জাতি(জন্ম), জাতি হেতু জরা, মরণ, শোক, পরিদেবন, দুঃখ, দৌর্মনস্য ও নৈরাশ্য প্রভৃতি উৎপন্ন হয়। মহাতৃষ্ণাসংক্ষয় সূত্রে আরো উল্লেখ আছে- ইমস্মিং অসতি ইদং ন হোতি, ইমস্স নিরোধা ইদং নিরুজ্ঝতীতি। অর্থাৎ, ইহা বিদ্যমান না থাকলে তাহা হয় না, ইহার নিরোধে তাহা নিরুদ্ধ হয়। অবিদ্যা নিরোধে সংস্কার নিরোধ, সংস্কার নিরোধে বিজ্ঞান নিরোধ, বিজ্ঞান নিরোধে নাম-রূপ নিরোধ, নামরূপ নিরোধে ষড়ায়তন নিরোধ, ষড়ায়তন নিরোধে স্পর্শ নিরোধ, স্পর্শের নিরোধে বেদনা নিরোধ, বেদনা নিরোধে তৃষ্ণা নিরোধ, তৃষ্ণা নিরোধে উপাদান নিরোধ, উপাদান নিরোধে ভব নিরোধ, ভব নিরোধে জাতি নিরোধ, জাতি নিরোধে জরা, মরণ, শোক, পরিদেবন, দুঃখ, দৌর্মনস্য ও নৈরাশ্য নিরুদ্ধ হয়। এইরূপে সমগ্র দুঃখ স্কন্ধের নিরোধ হয়। উদান গ্রন্থের বোধিসূত্রানুসারে, উদ্ধৃত হেতুপ্রত্যয়তার প্রথমাংশকে (উৎপত্তি) অনুলোম দেশনা এবং পরের অংশকে(নিরোধ) প্রতিলোম দেশনা নামে উল্লেখ করা হয়েছে। শুধুমাত্র অনুলোমই প্রতিত্যসমুৎপাদের মূল সূত্র নাকি অনুলোম ও প্রতিলোম একত্রে প্রতীত্যসমুৎপাদের মূল দেশনা তা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত পাওয়া যায়। আর্য্যপর্য্যেষণ সূত্রে উৎপত্তি ও নিরোধকে আলাদা আলাদা ভাবে দেখানো হয়েছে।
আবার অভিধম্ম পিটকের ‘বিভঙ্গ’ গ্রন্থে ‘প্রতিত্য-সমুৎপাদ বিভঙ্গ’ এর বিশদ বর্ণনায় কেবলমাত্র উৎপত্তিরই বর্ণনা পাওয়া যায়। বুদ্ধ বুদ্ধত্ব লাভ করে ১ম এক সপ্তাহ বোধিপালঙ্কে কাটিয়ে দেন। সেখানে প্রথম রাত্রিতে প্রতীত্যসমুৎপাদের অনুলোম, প্রতিলোম দুটোই তিনি পর্যালোচনা করেন। প্রতীত্যসমুৎপাদ নীতি প্রসঙ্গে বিখ্যাত বিজ্ঞানী নিউটনের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি আবিষ্কারের ঘটনাটিকে আমরা উদাহরণ হিসেবে নিতে পারি- আপেল বৃক্ষ হতে আপেলের নিম্নদিকে পতন দেখে নিউটনের মনে প্রশ্ন জেগেছিল; আপেল সরাসরি নিচের দিকে পড়ে কেন, এটি উপরদিকে কিংবা বামে ডানে কোনদিকে যায় না কেন। তার এই আত্মজিজ্ঞাসা স্বীয় দৃষ্টি এবং চিন্তা চেতনায় প্রবলভাবে নাড়া দেয়। আর তারই ফলশ্রুতিতে আবিষ্কৃত হয় ‘মাধ্যাকর্ষণ শক্তি’। অর্থাৎ পৃথিবীর আকর্ষণের কারণেই আপেল নিচের দিকে পতিত হয়। তথাগত সম্যক সম্বুদ্ধের আবির্ভাব ঘটুক বা না ঘটুক, জন্ম, জরা, ব্যাধি, মরণের ঘটনা ঘটছে এবং ঘটবে। এটি কার্য্যকারণ নীতি কিংবা প্রতীত্যসমুৎপাদ নীতিতে চক্রাধীন। তথাগত বুদ্ধ এই চক্র উদ্ভাবন করে দুঃখে জর্জরিত সত্ত্বগণকে দুঃখ থেকে চির মুক্তির পথ দেখিয়ে গেছেন। সৃষ্টিকর্তার খেলা, লীলাময়ের লীলা, ইচ্ছাময়ের ইচ্ছা কিংবা অদৃশ্য শক্তির দোহাই দিয়ে খেয়ালখুশীমত কোন অজুহাতের স্থান নেই। একটা সময় ছিল মানুষ জোঁয়ার-ভাটাকে অদৃশ্যকর্র্তার খেলা বা শক্তি প্রদর্শন হিসেবেই জানত। পরে ইহার কারণ খুঁজতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেলেন চন্দ্রের আকর্ষণকে। যতদিন পর্যন্ত আকর্ষণের কথা আবিষ্কৃত হয়নি ততদিন জোঁয়ার-ভাটা হওয়াটাকে আশ্চর্য বিষয় হিসেবেই জানা হত। কার্যকারণনীতিও জোয়ার-ভাটা হওয়ার সেই আশ্চর্য বিষয়ের মতো, যেখানে তথাগত বুদ্ধ এই ঘুর্ণায়মান ভবচক্রের কারণ আবিষ্কারক। বিভিন্ন বিষয়ে বিজ্ঞানীরা অজ্ঞাতভাবে এই কার্যকারণনীতিকেই মেনে চলে কেননা তারা প্রতিটি বিষয়েরই সুনির্দিষ্ট প্রমাণ খোজে। এই সুশৃঙ্খল কার্যকারণ নীতি পর্য্যবেক্ষণ এবং প্রমাণযোগ্য।
এখানে আত্মবিশ্বাসের কোনো স্থান নেই এটি আত্ম উপলব্ধির বিষয়। এ নীতিই বিশ্বে তথাগত বুদ্ধের অন্যতম অবদান। অন্যান্য ধর্ম যেখানে এক অদৃশ্য শক্তিকে সর্বোচ্চ আসনে বসিয়ে তার ইচ্ছা বলে সব চালিয়ে দেয় সেখানে তথাগত বুদ্ধের আবিষ্কৃত এই নীতি সব ধর্ম হতে বুদ্ধধর্মকে পৃথক করেছে। এ নীতিতে যাঁরা সামান্যতমও ব্যবহারিক জ্ঞান লাভ করেছেন তারা এক বাক্যে স্বীকার করেছেন বুদ্ধের ধর্মের অতুলনীয় মাহাত্ম্যের কথা। আর যাঁরা এ নীতি দ্বারা সাধনালব্ধ পারমার্থিক জ্ঞান লাভ করেছেন তাদের কথা আর কি বলার থাকতে পারে। প্রতীত্যসমুৎপাদনীতি কে বুঝার সুবিধার্থে ‘পটঠান’ এর ‘অনন্তর পচ্চয়ো’ কে উদাহরণ হিসেবে নেওয়া যেতে পারে। অনন্তর পচ্চয়ো দিয়ে বুঝানো হয় বিলুপ্তহীনভাবে। রাজার মৃত্যুর পর তার ছেলে রাজ্য শাসন করে। পরবর্তীতে তার ছেলে, তার ছেলে, এভাবে বংশানুক্রমে এটা চলতে থাকে। অনন্তর পচ্চয়ো হচ্ছে বিলুপ্তহীন সাহায্যকারী ধর্ম। আর সংসার বা ভবচক্রও বিলুপ্তহীনভাবে চলতে থাকে। যতক্ষণ না ব্যক্তি এই চক্রের বন্ধন ছেদন করতে সক্ষম হয়। এটা সত্য যে, বুদ্ধ এই কার্যকারণনীতি বা প্রশ্নোত্তর দ্বারা জীবন রহস্য ও জগৎ রহস্য উদ্ঘাটন করেছেন তবে এ তত্ত্বের মধ্যে জগতের আদি খুঁজতে যাওয়া ঠিক নয় কারণ এ নীতিতে ভগবান বুদ্ধ জগতের আদিতত্ত্ব পরিবেশন করেননি। তথাগত বুদ্ধ জগতের আদিতত্ত্ব অনুসন্ধানকে উম্মাদের কাজ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি মালঙ্ক্যপুত্রকে এই বিষয়ে বিশদ বর্ণনা করেছেন। তথাগত এই বিষয়সমূহ অবর্ণিত অব্যাখ্যাত রেখেছেন। কারণ সেগুলো ধারণা বা মত মাত্র। এতে কোন কল্যাণ সাধিত হয়না, মুক্তির সন্ধান মিলেনা। তাই এই আলোচনায় সময় ব্যয় করা অর্থহীন। এ তত্ত্ব শেষ পর্যন্ত কারো জানাই হয় না, জানতে পারেন না, পরিশেষে অনুতপ্ত অবস্থায় জীবনাবসান হয়।
প্রতীত্যসমুৎপাদ নীতি অত্যন্ত গম্ভীর। জ্ঞান দ্বারা, ব্যবহারিক অনুশীলন দ্বারা এই গম্ভীরতাকে জয় করতে হয়। দীর্ঘনিকায়ের ‘মহানিদান সূত্রে’ দৃষ্ট হয়- আনন্দ তথাগত বুদ্ধকে বলছেন ‘ভন্তে, আশ্চর্য, অদ্ভুত! এই প্রতীত্য-সমুৎপাদ নীতি যেমন গভীর তেমনই গভীররূপে প্রতীয়মান হয়; অথচ আমার নিকট উহা অতি সুষ্পষ্ট।’ তথাগত আনন্দকে পরপর তিনবার নিষেধ করে বললেন- ‘হে আনন্দ! এরূপ বল না। প্রতীত্য-সমুৎপাদ গম্ভীর, গম্ভীর এর দীপ্তি। আনন্দ! এই ধর্ম না জেনে না বুঝে মনুষ্যগণ বিজড়িত তন্তÍুর মতন, জটিভূত সূত্র পিন্ডের মতন, মুঞ্জতৃণগ্রন্থির মতন হয়েছে এবং অপায়, দুর্গতি, অধঃপতন ও সংসারচক্র অতিক্রম করতে পারছে না।’ তথাগতের এ বাক্যের দ্বারা প্রতীত্য-সমুৎপাদের গম্ভীরতা প্রতীয়মান হয়। প্রতীত্যসমুৎপাদ মূলত পালি বইয়ের কোন বিষয় নয়, আবৃত্তিরও কোন বিষয় নয়; এটার অবস্থান আমাদের অভ্যন্তরেই। আর যেখানে এই শৃঙ্খল বিদ্যমান রয়েছে সেখানে দুঃখ ব্যতীত আর কিছুই নেই। নিদানবর্গ সংযুক্তে বলা হয়েছে- কেউ প্রতীত্যসমুৎপাদ চক্রে জীবন কাটাচ্ছে মানে হচ্ছে তিনি মিথ্যা প্রতিপদায় অর্থাৎ ভুল পথে রয়েছেন। আর যিনি বিদর্শনচর্চায় রয়েছেন তিনি সম্যক প্রতিপদায় অর্থাৎ সঠিকপথেই রয়েছেন। যারা বিদর্শন অনুশীলন করেন তারা পুনঃপুনঃ জন্মের শৃঙ্খল ভঙ্গের চেষ্টা করেন। এজন্য বলা হয়ে থাকে যারা বিদর্শন অনুশীলন করেন তারা ‘বেদনা পচ্চযা তণহা’ কে ‘বেদনা পচ্চযা পঞঞা’ তে রূপান্তরের চেষ্টা করেন। বিদর্শন অনুশীলন না করলে বেদনা তৃষ্ণার উৎপাদনই করবে। যারা বিদর্শনচর্চা করে তারা তৃষ্ণাকে প্রজ্ঞায় পরিণত করে।
লেখকঃ সহকারী সম্পাদক, ত্রৈমাসিক ‘অমিতাভ’
সূত্রঃ মধ্যম নিকায় (১ম খন্ড)- শ্রীবেণীমাধব বড়ুয়া অনূদিত মধ্যম নিকায় (২য় খন্ড)- পন্ডিত ধর্মাধার মহাস্থবির অনূদিত বিভঙ্গ-শ্রীমৎ জ্ঞানেন্দ্রিয় ভিক্ষু অনুদিত কার্যকারণ নীতি- ডাঃ প্রিয়নাথ বড়ুয়া, পট্ঠান(সংক্ষিপ্ত)- শ্রী সত্যপ্রসন্ন বড়ুয়া

সুত্র;http://nirvanapeace.com

0 চর্যাপদের ধর্ম-দেশনা

চর্যাপদ সাধন-সংগীত। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী এগুলোকে বৌদ্ধ গান বলেছেন। কিন্তু চর্যাপদ নির্ভেজাল ধর্ম-গীতি নয়। তা’ এক বিশেষ শ্রেনীর বৌদ্ধ সাধন- সংগীত। আলোচ্য সংগীতসমূহকে ’বৌদ্ধ’ শব্দের বিশেষিত করার কারণ- চর্যাগুলো যাঁরা রচনা করেছেন, তাঁরা বৌদ্ধ ঐতিহ্যধারার-ই ধর্মসাধক। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, চর্যাগীতিসমূহ বৌদ্ধ ধর্মশাস্ত্র ‘দীর্ঘনিকায়’- এর ’অমরা বিক্ষেপিত’- এর নিয়মানুযায়ী দ্ব্যর্থক ভাষায় রচিত। দ্বিতীয়তঃ চর্যাপদের রচনানীতি লৌকিক; কিন্তু বিষয়বস্তু ও মূলভাবনা বৌদ্ধ ’ধর্ম্মপদে’ প্রোথিত । ’ধন্মপদে’ বলা হয়েছে–
“বনং ছিন্দথ মা রুক্খং বনতো জায়তে ভয়ং।
ছেতœা ’বন’ঞ্চ ’বনথ’ঞ্চ নিব্বনা হোথ ভির্কখবো ॥১১॥’’
মগ্গ বগ্গো–২০শ ॥১
একটা মাত্র বৃ ছেদন না করে সকাল অরণ্য উৎপাটন কর। বন থেকে ভয়ের সঞ্চার হয়। বন ও বনজ লতাদি ছিন্ন করে হে ভিুগণ তোমরা অরণ্যমুক্ত হও।’ ঠিক এ -কথাই বলেছেন কাহ্ন পা।
মণ তরু পাঞ্চ ইন্দি তসু সাহা।
আসা বহল পাত ফল বাহা ॥
বরগুরু বঅণে কুঠারেঁ ছিজই ।
কাহ্ন ভণই তরু পুণ ন উঅজই ॥
সুুন তরুবর গঅণ কুঠার।
ছেবহ সো তরু মূল ন ডাল।
কাহ্ন/৪৫।
‘ধর্মপদের’ উদ্ধৃত দু’পংক্তিতে বিকৃত বক্তব্যই কাহ্ন একটি সমগ্র চর্যায় বি¯তৃত আকারে কাব্যগত করেছেন। ‘অরণ্য উৎপাটনে’র এ-কথাই ‘ধর্মপদে’র ’বহ্না বগ্গো’র ষষ্ঠ শ্লোকে বলা হয়েছে-
“মাতরং পিতরং হনত্ত্বা রাজানো দ্বে চ সোথিয়ে।
বেয্যগৃষ পঞ্চমং হন্ত্ত্বা অনীঘো যাতি ব্রাহ্মণো ॥৬॥
পকিন্নক বগ্গো–২১॥’’২
“মাতা, পিতা ও দুই ব্রাহ্মণ রাজাকে হত্যা করে এবং ব্যাঘ্রের বিনাশ করে — ব্রাহ্মণে দুঃখহীন হন।’ একাদশ সংখ্যক চর্যার শেষ পংক্তিদ্বয়ে কাহ্ন ও ঠিক একথাই বলেছেন।”
মারি সাসু ননন্দ ঘরে সালী।
মাঅ মারি কাহ্ন ভঅই কাবালী ॥
কাহ্ন।১১।
’‘ধন্মপদে’র পূর্বোক্ত শ্লোকে ‘মাতা’ অর্থ ‘তৃষ্ণা’, ‘পিতা অর্থ ‘আতœাভিমান’, দুই ‘রাজা’ অর্থ ‘শাশ্বত দৃষ্টি’ এবং ‘উচ্ছেদ দৃষ্টি’, ‘রাষ্ট্র’- ‘দ্বাদশ আয়তন’, ‘অনুচর’–‘ভোগে তীব্র অনুরাগ’ এবং ‘ব্যাঘ’ অর্থে– ভ্রান্তমাগ’, (ভিু শীলভদ্রের টীকা)! আর চর্যাপদের উদ্ধৃতাংশে ‘সাসু’- ‘মন-পবন’ বা শ্বাস-প্রশ্বাস ননন্দ অর্থ-আনন্দদায়ী ‘পঞ্চেন্দ্রিয়’, ‘সালী’– ‘স্বভাব’ এবং ‘মায়া’ অর্থে ‘অবিদ্যা’ – প্রজ্ঞা ও উপায়ের মিলনে ব্যাঘাত সৃষ্টিকারী উপাচার (মুনীদত্তের টীকা)।
অনুরূপভাবে ‘ধর্মপদে’র ‘ভিক্খু বগগো’-র একাদশ শ্লোকে বলা হয়েছে–
“পঞ্চ ছিন্দে পঞ্চ জহে প্ঞ্চ বুত্তরি ভাবয়ে।
পঞ্চ সদাতিয়ো ভিক্খু ওঘতিন্নোতি বুচ্চতি ॥১১॥
ভিক্খু বগ্গো–২৫শ ॥’’৩
“পঞ্চ (বন্ধন) ছিন্ন কর, (অপর) পঞ্চ ত্যাগ কর, তদুপরি পঞ্চেন্দ্রিয়ের চিন্তা কর। যে ভিু পঞ্চের সঙ্গে স্পর্শ অতিক্রম করেছেন, তিনি প্লাবন উর্ত্তীণ কথিত হন।” মহীধর পা-র ষোল নম্বর চর্যার মূল বক্তব্য ও এ-ই।
তিনি এঁ পাটেঁ লাগেলি রে অণহা কসণ বণ গাজই।
তা শুনি মার ভয়ঙ্কর রে বসঅ মণ্ডল সঅল ভাজই॥
.. … … ….
মহারস পানে মাতেল রে তিহুঅন সঅল উএখী।
পঞ্চ ষিয় রে নায়ক রে বিপথ ােবী ন দেখী ॥
মহীধর।১৬।
‘ধর্মপদে’র পঞ্চ বন্ধন, চর্যাপদের পঞ্চ নায়ক- সৎকায় দৃষ্টি, বিচিকৎসা, শীলব্রত, পরামর্শ এবং প্রতিঘ। ধন্মপদের অপর পঞ্চ চর্যাপদের পঞ্চনায়ক – রূপ-রাগ, অরূপ -রাগ, মান ঔদ্ধত্য ও অবিদ্যা।ধর্মপদের পঞ্চেন্দ্রিয় চর্যাপদের মারুমণ্ডল –শ্রদ্ধা, স্মৃতি, বীর্য, সমাধি এবং প্রজ্ঞা। চর্যাপদে এগুলো অস্বীকৃত। সেজন্য নায়ক মহারস পান করে এসব আর বিরোধী বলে মনে করছেন না। ‘ধর্মপদে’র আবেদন থেকে চর্যার (বিষয়বস্তুর অভিন্নতা সত্ত্বেও) আবেদনের এ ভিন্নতা, সাধন-পদ্ধতি সম্পর্কে কবিদের ভিন্ন উপলদ্ধিজাত বই অন্য কিছু নয়। ধন্মপদের অনুরূপ উক্তিও হুবহু কৃষ্ণাচার্যের এয়োদশ সংখ্যক চর্যার তৃতীয় শ্লোকে এবং ভুসুকু পাদের ঊনপঞ্চাশ নম্বর কবিতার তৃতীয় শ্লোকে বিদ্যমান।
ধন্মপদের ’ভিক্খু বগগো’-তে বলা হয়েছে–
“সিঞ্চ ভিু ইমং নাবং, সিত্তা তে লহু মেস্সতি।
ছেত্বা রাগঞ্চ দোসঞ্চ ততো নিব্বান মেহিসি॥১০॥
ভিক্খু বগ্গো – ২৫শ ॥’’৪
হে ভিু, এই নৌকা সেঁচন কর। সেঁচনে নৌকা লঘু হয়। রাগ ও দ্বেষ দূরে নিপে করে তুমি নির্বাণ লাভ কর।’ বৌদ্দ নম্বর চর্যায় ডোম্বী পা-ও এরূপে নির্বাণ লাভের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
পাঞ্চ কেড়–য়াল পড়ন্তেঁ মাঙ্গে পিঠত কাচ্ছী বান্ধি।
গঅণ দুখোলেঁ সিঞ্চহু পানী ন পইসই সান্ধি॥
ডোম্বী।১৪।
এছাড়া ’ধর্মপদে’র ‘জরা বগগো’- প্রথম শ্লোক, ‘চিত্ত বগগো’– তৃতীয় শ্লোক প্রভৃতির সঙ্গে চর্যাপদের ধাম পাদের (৪৭) দ্বিতীয় শ্লোক ও কুক্কুরী পাদের দ্বিতীয় চর্যার ভাব সাযুজ্য লনীয়।
উদ্ধৃতিসহ পূর্বোক্ত তুলনামূলক আলোচনা থেকে দেখা যায়, ধন্মপদে যা’ সংপ্তিাকারে বলা হয়েছে– চর্যায় তা-ই নানা রূপক- উপমায় নিজস্ব পন্থায় সিদ্দাচার্যগণ বিশদভাবে বলেছেন। এজন্য ’ধন্মপদ’ কারণ চর্যার কবিরা সমগ্রভাবে অডবিকৃত মূল বৌদ্ধ মতবাদে বিশ্বাসী নন। সরহ স্পষ্টতঃই দোহাকোষ- প্রধান দুই বৌদ্ধমত– সৌত্রান্তিক ও মহাযানকে বেদ ও আগমবাদের সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
॥২্॥
কাজেই চর্যায় যে ধর্মমত বিজ্ঞাপিত — তা’ ’আশ্চর্য। তাতে বৌদ্ধধর্মের ধ্যানের, পারমিতার, পঞ্চব্রতের, মন্ত্রের, অর্হত্ত্বের কোন কথা নেই। বৌদ্ধ দেব -দেবী, পাপদেশনা বা পুণ্যানুমোদনা, দশবিধ সত্ত্বভূমি, স্তুপ, চৈত্য প্রভৃতি ও চর্যায় অনুপস্থিত। হীন-যানীদের কঠোর নিয়ম-নিষ্ঠা কিংবা মহাযানীদের পূজা-অর্চনা, ত্রিশরণ প্রভৃতির প্রতি আনুগত্য ও চর্যার কবিরা তুলে ধরেননি। বরং এসবের প্রতি তাঁরা বীতশ্রদ্ধ। তন্ত্র, মন্ত্র, ধ্যানাদি সম্পর্কে দারিক এর উক্তি–
“কিস্তেহা মস্তেঁ তন্তেঁ কিন্তো রে ঝান বখাণে।”
দারিক।৩৪।
“সমাধি সম্পর্কে লুই এর অভিমত–
সঅল সমাহিঅ কাহি করিঅই।
সুখ দু॥খেতেঁ নিচিত মরিঅই ॥
লুই ।১।
‘আগম-বেদ’ প্রভৃতি ’ধর্মশাস্ত্র সম্পর্কে ও লুই বলেন–
জাহের বাণ চিহ্ন, রূব ণ জাণী
সো কইসে আগম বেত্রঁ বখাণী ।।
লুই।২৯।
তাড়কও বলেন–
বাক পথাতীত কাহি বখানী ॥
তাড়ক ।৩৭।
শাস্ত্র এবং তপ জপাদির প্রতি কাহ্ন, প-ও বিরক্ত। তাঁর উক্তি–
জো মণ গোঅর আলাজালা
আগম পোথী ইষ্টামালা ॥
কাহ্ন।৪০।
পাপপুণ্য সম্পর্কে চর্যাকারদের বক্তব্য–
পাপপূণ্য বেণি তোড়িঅ সিকল মোড়িঅ খন্তুা ঠানা।
গঅণ টাকলি লাগি রে চিত্তা পইঠা নিবাণা ॥
মহিধর ।১৬।
কালচক্রের সাধনাও এদের নয়। তাই কালচক্রযানী’দের প্রতি কটা–
বাহতু কামলি গঅণ উবেসেঁ।
গেলি জাম বাহুড়ই কইসেঁ।।
কম্বলাম্বর।৮।
অতএব, স্পষ্পতঃ মূল বৌদ্ধ ধর্মের -হীনযান ও মহাযান প্রত্যেক বৃদ্ধ যান, শ্রাবকযান, মন্ত্রযান, কালচক্রযান প্রভৃতির প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য, ল্য ও তা লাভের উপায় চর্যাপদে অনুপস্থিত, অস্বীকৃতও। কারণ স্বরূপ বলা যায়, “রণশীল হিন্দু ধর্মের প্রথাগত সংকীর্ণতাকে অনুমোদন না করে মহাযানী বৌদ্ধমতের বিস্তার। –দোঁহাকোষ এবং চর্যাপদে তার দৃষ্টান্ত অজস্র। আসলে দেশের মধ্যে প্রচলিত ধর্মমতে উৎপীড়িত মানুষের সচেতন বিদ্রোহ এবং অব্যাহতি কামনা থেকে– (এই মতবাদের) জন্ম বলে এরমধ্যে প্রস্পিধার (Challenge)  কন্ঠ এত সরব। চযাপদে মহাযানী বৌদ্ধমতের অনেক উপাদান অনুপস্থিত। তা পূর্বে বলা হয়েছে। কাজেই এই ধর্ম-সংগীতগুলো মহাযান বৌদ্ধ-সংগীত নয়। তবে তা যে মহাযানের-ই মত প্রতিক্রিয়াজাত চিন্তাধারা থেকে উৎপন্ন-তাতে কোন সন্দেহ নেই। যে প্রথাগত আচার – সর্বস্বতা, নিয়ম- নিষ্ঠা ও গোড়ামীকে অস্বীকÍ করে মহাযান মতবাদ উদ্ভুত হয়, দীর্ঘদিন পর তারই চারপাশে গড়ে ওঠা আচার-নিষ্ঠা ও প্রথাগত সংকীর্ণতার বিরুদ্ধে আবার নতুন বিদ্রোহ দেখা দেয়। এজন্য মূল বৌদ্ধ মত থেকে বিচ্যুত হয়েও মহাযান যেমন বৌদ্ধ মতবাতই , তেমনি মহাযানকে খণ্ডন করেও চর্যার কবিরা বৌদ্ধ মতবাদ বা ধর্মই স্থিত।
প্রমাণ স্বরূপ বলা যায়, চর্যাপদে মূল বৌদ্ধ মতবাদের বহু উপাদান অনুপস্থিত ও অস্বীকৃত হলেও অনেক উপকরণ উপস্থিত এবং স্বীকৃতও। মহাযান বৌদ্ধ ধর্মের ত্রিশরণ, শূন্যতা, নির্বাণ, পঞ্চঙ্কন্ধ, বোধি, সম্বোধি, মার-বিজয়; বজ্রযানের প্রজ্ঞা, উপায়, শূণ্যতা, করুণা, মহারস, মহাসুখ, জিনপুর, সমরস, মো, নৈরাতœাদেবী, যোগাসন; বৌদ্ধতন্ত্রের অষাটসিদ্ধি, রস-রসায়ন পান প্রভৃতি চর্যাপদে বিদ্যমান। মূল বৌদ্দ অনাতœবাদ চর্যাপদে আবি®কৃত রয়েছে। ত্রিশরণ, শূণ্যতা এবং ননির্বাণ ও মূল বৌদ্ধ মতবাদের প্রজ্ঞাপারমিতা’র ’লঙ্কাবতার’ সূত্রে শূন্যবাদ সম্পর্কে বুদ্ধদেব তাঁর জনৈক আলোচনা করেছেন। হীনযান ও মহাযানে নির্বাণ লাভই চরম ল্য। তারজন্য চাই শূন্যতার সাধনা। অস্তিত্বকে অনস্তিত্বে মিলিয়ে দিতে হবে — কারো মতে, –ধ্যান, নিষ্ঠা, সংযম ও আচার- পরায়ণতার দ্বারা স্বয়ং বুন্ধত্ব লাভের মাধ্যমে (মহাযান)। কাজেই হীনযান ও মহাযানে যেমন ল্য এক হলেও উপায় ভিন্ন, পথ পৃথক*-চর্যাপদেও তেমনি শূন্য সাধনার দ্বারা নির্বাণ লাভই চরম উদ্দেশ্য হওয়া সত্ত্বেও উপায় বা পথ আলাদা।
চর্যাকারদের মতে শূন্যসাধনা ও নির্বাণ লাভের জন্য প্রয়োজন সহজ পথ অবলম্বন। “সহজ সহাব ণ ভাবাভাব।’’ বৌদ্ধধর্মে ত্রিশরণ গমনের ব্যবস্থা বিদ্যমান। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী বলেছেন–“ত্রিশরণ গমনের মন্ত্র দুই যানেই এক, তবে মহাযানে , ত্রিরতœ -বুদ্ধ, ধন্ম ও সংঘ নহে, ধন্ম, বুদ্ধ ও সংঘ। মহাযানে শাক্যমুনি একটি ‘মানুষী’ বুদ্ধ। মানুষী বুদ্ধের মধ্যেও তাহার স্থান সাতের দাগে।– বদ্ধ অপো ধন্ম মহাযানে বড়। স্তুপ বা চৈত্যই ধন্ম –। উহারা (নেপালের মহাযানীরা) বলে সংঘ ক্রমে বোধিসত্ত্বে পরিণত হইয়াছে।’’৬ অনুরূপভাবে চর্যাপদেও ত্রিশরণ গমনের ব্যবস্তা আছে । কাহ্ন পা বলেছেন–
তিশরণ ণাবী কিঅ অঠক মারী।
ণিঅ দেহ করুণা সূণ মেহেরী ॥
কাহ্ন ।১৩।
চর্যাপদে ক্রিশরণ –‘কায়বাকচিত্ত’ (মুনদত্তের টীকা)। এখানে বুদ্ধই কায়া, ’সংঘই’ চিত্ত। হীনযানীরা ধর্মনীতি ও সমাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত, মহাযানীরা ব্যস্ত দার্শনিক মতা ও পারমিতা বিষয়ে– আর চর্যার কবিদের মূল অবলম্বন মানবদেহের তত্ত্বোপলদ্ধি। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী বলেছেন– হীনযান মানুষকে বড় করবার চেষ্টা করেছে, কিন্তু মহাযানীরা দর্শনে শূন্যবাদী, নীতিতে ভোগবাদী। কাজেই বিভিন্নতা সত্ত্বেও তাঁরা বৌদ্ধ ধর্মের ঐতিহ্যেই স্থিত। চর্যার কবি সাধকগণ এরূপেণ যে বৌদ্ধ মহাযান ধারারই বিদ্রোহী উত্তরসাধক- তাতে কোন সন্দেহ নেই।
বিদ্রোহের জন্যই চর্যায় বৌদ্ধধর্ম- জীবনের অনাতœবাদী চরম ল্য শূন্যময় নির্বাণ লাভের উপায় স্বরূপ পূজা- অর্চনার পরিবর্তে- রেচক; পূরক, কুম্ভক প্রভৃতি শ্বাস ক্রিয়া: শাস্ত্রাদি পাঠের পরিবর্তে অবিদ্যা- দমন, অষ্ঠাঙ্গিক মার্গলাভ; ধ্যান, তপ-জপ, সমাধির পরিবর্তে — দেহ নগর বিহার, মহারস পান ও বুদ্ধ, অর্হৎ, বোধিসত্ত্ব হবার বদলে- সহজ স্বভাব অজরামর দৃঢ়স্কন্ধ বজ্রসত্ত্ব বা বাজিল>বাজুল বা বাউল হবার নির্দেশ বিধৃত। এজন্যই এগুলো আর্শ্চয চর্যা- আশ্চর্য বৌদ্ধ সংগীত। ’আশ্চর্যচর্যাচয়।’ কারণ, এসব, বৌদ্ধদের গান হলেও তাঁরা ধ্র“পদী বৌদ্ধ নন, সহজিয়া বৌদ্ধ বা বাজুল। একালের ভাষায় বাউল। চর্যাপদ সমূঞ সেকালের সেই বাউলদেরই বিচিত্র গান।
॥৩॥
কিন্তু ডঃ সুকুমার সেন চর্যাপদগুলো “কোন একটিমাত্র সাধক- গোষ্ঠির রচনা’’ বলে স্বীকার করেননি। কারণ স্বরূপ লিখেছেন– “একটি চর্যায় ‘বুদ্ধ’ আছে, — তিনটিতে “তথতা’’–, একটিতে “তথাগত”–, একটিতে “স্কন্ধ’’, তিনটিতে ‘বোধি’–, একটিতে “সম্বোধি’’—, সাতটিতে’’নির্ব্বাণ’’–। মহাযানের বিশিষ্ট পারিভাষিক শব্দ ‘শূন্য’ ‘গগন,’ ‘করুণা’, ইত্যাদি অনেকেই ব্যবহার করিয়াছেন। দুইটি চর্যায়– বৌদ্ধ তান্ত্রিক বজ্রধর হেরুকের নাম আছে। নৈরাতœাযোগিনীর নাম আছে দুইটি চর্যায়, –‘ণইরামণি’ রূফে। তান্ত্রিক মহাযানের বহু পারিভাষিক শব্দ ব্যবহার করিয়াছেন ভুসুকু। কতকগুলি চর্যাকে তান্ত্রিক- অতান্ত্রিক কোন রকম বৌদ্ধ মতের সঙ্গে সংযুক্ত বলা চলে না–। অনেকগুলি চর্যায় সাধক আপনাকে যোগী বলিয়াছেন বা শিষ্য ভক্তকে যোগী বলিয়া সম্বোধন করিয়াছেন।’’৭ ডঃ সেনের মতে তাই চর্যাপদ মহাযান, বজ্রযান , তন্ত্রযান, যোগবাদ প্রভৃতি মতবাদী কবিদের রচনার একটি ’’খিচুড়ি’ সংকলন। কিন্তু আলোচনা করলে দেখা যায়, তিনি যেসব পরিভাষার বিভিন্নতা দ্বারা চর্যাপদ বিভিন্ন মতবাদী কবি-সাধকের রচিত বলে অনুমান করেছেন সে-সব পরিভাষার মদ্যে মূলতঃ কোন বিরোধ নেই। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, ব্দ্ধু, বোধি ও সম্বোধি– বৌদ্ধ সাধকের তিনটি অবস্তা, বা বৌদ্ধ সাধনার তিনটি স্তর। ’জাতক’ সম্পাদনা করতে গিয়ে, ঈশান চন্দ্র ঘোষ লিখেছেন–’’বৌদ্ধরা বলেন, শুদ্ধ এক জন্মের কর্মফলে কেহই গৌতম প্রভৃতির ন্যায় অপাববিভূতিসম্পন্ন সম্যক সম্বুদ্ধ হইতে পারেন না; যিনি বুদ্ধ হইবেন, তাঁহাকে বোধিসত্ত্ব অর্থাৎ বুদ্ধাঙ্কুর বেশে কোটি কল্পকাল নানা যোনিতে জন্মজন্মান্তর পরিগ্রহ পূর্বক দানশীলাদি পারিমিতার অনুষ্ঠান দ্বারা উত্তরোত্তর চরিত্রের উৎকর্ষ সাধন করিতে হয়। পরিশেষে তিনি পূর্ণ প্রজ্ঞা লাভ করিয়া অভিসম্বুদ্ধ হন।’’ ৮ অতএব বুদ্ধ, বোধি ও সম্বোধি শব্দত্রয় তিন রকম ধর্মমতের পরিচায়ক নয়। ’তথাগত’ শব্দটি বুদ্ধেরই অন্যতম নাম। বুদ্ধের পাঁচপ্রকার ধ্যান থেকে পঞ্চ স্কন্ধাতœক বা পঞ্চভৌতিক জগতেরর সৃষ্টি। আর পঞ্চধ্যান থেকেই পঞ্চ দেবতার উদ্ভব। এঁরাই পঞ্চধ্যানী বুদ্ধ; ন্মাান্তরে পঞ্চ তথাগত। সকল বৌদ্ধমতেই পঞ্চস্কন্ধের (রূপ, বেদনা, সংজ্ঞা, সংস্কার, বিজ্ঞান) সমষ্টিই হোল জন্মলাভ। বৌদ্ধ কর্মবাদের পরিচয় দিতে দিয়ে ডঃ শশিভূষণ দাশ গুপ্ত লিখেছেন–’তাহাদের মতে জন্ম হইল একটি পঞ্চস্কন্ধাতœক একটি প্রবাহের আরম্ভ, মৃত্যু সেই প্রবাহের একটি ছেদ– পুনর্জন্ম হইল সেই ছেদের ভিতর দিয়া যে একটি কর্মপ্রবাহ ছিল সেই কর্মপ্রবাহকে অবলম্বন করিয়া পুনরায় একটি পঞচস্কন্ধাতœক কর্মপ্রবাহের আরম্ভ।’’৯ অততএব ’স্কন্ধ’ চর্যাপদে কোন ’অবৌদ্ধ’ মতবাদের উপকরণ নয়। পঞ্চস্কন্ধের ধ্বংসে জীবনর ধ্বংস হয়। কিন্তু জীবের কর্ম সেই মুহুর্তে নতুন স্কন্ধ উৎপাদন করে ও লোকান্তরে নতুন জীবন লাভ করে । এরূপ জন্ম-জন্ম দুখভোগ থেকে পরিত্রাণের জন্য সাধনার প্রয়োজন। সাধনার দ্বারা মানুষ জন্মরোধ করতে সম। তখন আর তারা পৃথিবীতে আসতে হয় না। দুঃখ ভোগ ও করতে হয় না। এই যে দুঃখ ভোগ থেকে নিবৃত্তি– এ-ই নির্বাণ। এ- অবস্থার নাম-ই ‘চতুষ্কোটি বিনির্মুক্ত’ শূন্যতা। মহাযানী বৌদ্ধমতে নাগার্জুন দ্বিতীয় খ্রীষ্টাব্দে শূন্যবাদের বিকাশ ঘটান। ডঃ] শশিভূষণ দাশ গুপ্ত বলেছেন–’’ সব সিদ্ধান্তকে খণ্ডন করিলে যাহা দাড়ায় তাহাই হইল নাগার্জুনের শূন্যবাদ; ‘শূন্যবাদের’র দ্বারা কোনও নতূন সিদ্ধান্তের স্থাপন বুঝাইতেছেনা।’’১০ একথা সত্য। এজন্য চর্যাপদে ’শূন্যবাদে’র উল্লেখ কোন ভিন্ন মতবাদীদের অস্তিত্ব- নিদেশর্ক নয়।
নাগার্জুনের পর অশ্বঘোঘ ’তথতা’বাদ প্রচার করেন। মহাযান শ্রদ্ধোৎপাদ’- গ্রন্থে ’তথতা’কে ধর্মের একটি শ্বাশ্বত সত্ত্বারূপে বর্ণনা করা হয়েছে। এই ’রূপ’’– ’’অস্তি, নাস্তি, তদভয় এবং তদু ভয়ের অভাব হইতে ঊর্দ্ধে।’’ ১১ তা’ শূন্যতা ব্যতীত আর কিছু নয়। সাংখ্যের পুরুষ- প্রকৃতির প্রভাবে মহাযানে ’শূন্যতা’ ও ’করুণার’ ধারণা অনুপ্রবিষ্ট হয়। পরবর্র্তী কালে বজ্রযান– এই ’শূন্যসত্ত্ব’কেই ’বজ্রসত্ত্ব’ রূপে প্রচার করে এবং তন্ত্রের প্রভাবে বজ্রসত্ত্বের শক্তি বজ্রেশ্বরী বা বজ্রসত্ত্বিকার ধারণা গৃহীত হয়। বজ্রসত্তিকাই নইরামণি দেবী। কাজেই বজ্রযানে যে বৌদ্ধ তন্ত্রের যথেষ্ট প্রভাব ছিল– তা স্বীকার্য। চর্যাপদ, বজ্রযান থেকে বিবতিত সহজযানী বৌদ্ধদের রচিত হওয়ায় তাতেও সে প্রভাব অনুপ্রবেশ না করে পারেনি। বস্তুতঃ বৌদ্ধতন্ত্রের প্রভাব চযাপদ- রচিয়তা সহজযানী কবি- গোষ্ঠঅর উপর প্রচুর। চর্যাপদে তাই নানা তান্ত্রিক পরিভাষা তাকা বিভ্রান্তিকর নয়– স্বাভাবিক।
ঐতিহাসিক ধারায়– অসঙ্গ ও বসুবন্ধু কর্তৃক চতুর্থ বা পঞ্চম শতকে যোগাচার বৌদ্ধধর্মে অনুপ্রবিষ্ট হয়্ বৌদ্ধ যোগাচার মতের ক্রম- পরিণত পরবর্তী রূপই হোল বৌদ্ধ নাথ পন্থ। অন্যদিকে এ সময় থেকে তন্ত্রের প্রভাবও বৌদ্ধ ধর্মে দেখা দিতে থাকে। প্রাচীনতম ব্দ্ধৌ তন্ত্র- গ্রন্থ ’তত্ত্বগাথাগুজইঝকা’- আলোচনা প্রসঙ্গে জে, ফিনিগেন লিখেছেন– ’As foreshadoeed in Suvarna- Prabhasa, the influenc of Tantrism Increasingly penatrated some sections of Mahayana Buddhism and in the work here mentioned we have an active Buddhist Tantra, The book was accepted as very authoritative as early the seventh century.” ১২ অষ্টম -নবম শতকে বৌদ্ধ তন্ত্রের প্রভাব সর্বব্যাপী হয়ে ওঠায় ঐ সময়কার চর্যারচয়িতা সহজযানী দেহবাদীদের রচনায় তার উপস্থিতি বিস্ময়কর নয়। কোন ভিন্ন মতবাদের নিদর্শনওও নয়। কারণ নদেহকে কেন্দ্র করেই তন্ত্রের উৎপত্তি। আর ’’দেহতি বুদ্ধ বসন্ত ন জানই’’– বাণীর প্রবক্তাগণ যে তাঁদের রচনায় তান্ত্রিক পরিভাষা ব্যবহার করবেন, তা স্বাভাবিক। আর যোগের সঙ্গে তন্ত্রের অঙ্গাঙ্গী সম্পর্ক থাকায় চর্যাপদ সমূহে কবিগণ নিজেকে বা শিষ্যকে যোগী বলে অভিহিত করাও দোষাবহ নয় কিংবা বিভ্রান্তিকর নয়।
সংেেপ বৌদ্ধধর্মের বিকাশ ল্য করলে দেখা যায়, বৌদ্ধধর্ম প্রথম হীনযান ও মহাযান — এই দুই ভাগে বিভক্ত হয়। মহাযানী বৌদ্ধগণ, প্রত্যেকবুদ্ধযান ও শ্রাবকযানীদের হীনযান বলতেন। তারপর মহাযান থেকে উৎপত্তি হয় — বজ্রযান, মন্ত্রযান, কালচক্রযান ও নাথপন্থ। অতঃপর বজ্রযান থেকে সহজযানের উৎপত্তি। সহজযানী বৌদ্ধদের রচনায় তাই যোগ, তন্ত্র ও মূল বজ্রযান- মহাযানের ধ্যান-ধারণা কিছু কিছূ অবশিষ্ট থাকা অপরিহার্য। একারণে তৎসমুদয়ের নানা পরিভাষাও পরিত্যক্ত হতে পারে না। ফলে চর্যাপদে একই ধর্মের বিভিন্ন গোষ্ঠীর নানা পরিভাষা থাকার জন্য — তা কোন একটি গোষ্ঠীর সাধন- সংগীত নয়, এমন কথা বলা যায় না।বরং অভিনিবেশ সহকারে ল্য করলে দেখা যায়– চর্যাপদসমূহ একটি মত্র ধর্মগোষ্ঠীরই সাধন- গীতি।
॥৪॥
চর্যাপদ কোন্ ধর্মগোষ্ঠী কর্তৃক রচিত সে সম্পর্কে শিবচন্দ্র লাহিড়ী বলেছেন–’ আলোচ্য চর্যাপদ মহাযানী বৌদ্ধভাব সাধনার-ই আনন্দগান।’’১৩ তিনি ’ধন্মপদে’র পূর্বোক্ত কতিপয় শ্লোকের সঙ্গে কোন কোন চর্যাপদের বাহ্য বক্তব্যের সাদৃশ্য দেখেই একথা বলেছেন। কিন্তু চর্যাপদের আভ্যন্তরীণ স্যা বিচারে এগুলোকে মহাযানী বৌদ্ধ সাধন-সংগীত বলা যায় না। অষ্টম-নবম শতাব্দীতে মহাযান বৌদ্ধ ভাবসাধনার কোন একক অবিকৃত রূপ ও অবশিষ্ট ছিলনা। অবশ্য শিবচন্দ্র লাহিড়ী অন্যত্র বলেছেন–’’চর্যাপদাবলীর রহস্য তন্ত্রযোগাচারমূলক।’’১৪ এ উক্তি অনেকটা গ্রহণযোগ্য। চর্যাপদের সাধনায় দেহশোধন, মহারসপান, নর-নারীর যৌনমিলন জনিত অদ্বয় অবস্থা লাভের বিধান দৃষ্ট হয়। সরহ স্পষ্ট বলেছেন–
জা এথু জাম মরণেরি সঙ্কা
সো করউ রস রসানেরে কংখা ॥
সরহ।২২।
তন্ত্রমতে রস- রসায়নেই দেহ অজর- অমর হয়। সাধক ত্রিদশ ভূবন (?)
ভ্রমণে সম হন। অজর-অমর অবস্তাতেই হেরুকপ্রাপ্তি ঘটে। অন্যথায়, অর্থাৎ রস-রসায়নের সাধন ব্যতীত ’’ হেরুঅ ণ পাবিঅই।’’তন্ত্র সাধক হেরুক প্রাপ্তির জন্য দিব্যমার্গের সাধনা করেন। তিনি এক অদ্বয় তত্ত্বে উপনীত হবার প্রয়াস পান। হিন্দু বৌদ্ধ উভয় বিধ তন্ত্রে, ’’ একটি অদ্বয় তত্ত্বই হইল পরমতত্ত্ব। এই পরম অদ্বয়তত্ত্বের দুইটি ধারা- হিন্দুমতে একটি হইল শিব – অপরটি শক্তি। গুণাতীত নিষ্ফল শিব হইলেন বিন্দু — তাহাই হইল নিবৃত্তিতত্তব, আর ত্রিগুণাতিœকা শক্তি হইলেন নাদ– ইহাই হইল প্রবৃত্তিতত্ত্ব; এই বিন্দু -নাদ-নিবৃত্তি -প্রবৃত্তি- ইহাদের মিলনের নিুগাধারায় হইল সংসার প্রবাহ, আর তাহাদেরই মিলনের ঊর্ধগাধারায় হইল অদ্বয়ে প্রতিষ্ঠা– সহজানন্দ বা মহাসুখপ্রাপ্তি।’’ অন্যদিকে ’’শূন্যতা এবং করুণাই হইল বৌদ্ধমতে অদ্বয় বোধিচিত্তের দুইটি ধারা- একটি প্রজ্ঞা, অপরটি উপায়, — একটি বিন্দু– অপরটি নাদ; একটি নিবৃত্তি– অপরটি প্রবৃত্তি। এই প্রজ্ঞা– উপায়ের মিলনের নিু-ধারায় হইল বহিঃসৃষ্টি জরামরণ দুঃখদৌর্মস্যের জীবনযাত্রা/ তাহাদের মিলনের একটি ঊর্ধধারা আছে–, এই উর্ধদারার পথই হইল অবধূতিকা মার্গ; সেই মার্গ অবলম্বন করিয়া ‘স্রোতে উজাইয়া’ চলিতে পারিলেই হয় অদ্বয় স্বরূপে প্রতিষ্ঠা লাভ সেই প্রতিষ্ঠাতেই হয় যে মহাসুখ লাভ তাহাই হইল সহজানন্দ– তাহাই হইল ’সামরস্য’। নিবৃত্তি রূপিনী শূন্যতাকে অবলম্বন করিয়া প্রবাহিত হয় একটি রস-প্রবৃত্তি রূপী করুলাকে অবলম্বন করিয়া প্রবাহিত হয় সম্পূর্ণ রিবুদ্ধ ধর্মের আর একটি রস; এই উভয় রসের ধারাই স্বাভাবিক ভাবে নিুগা। এই উভয় রস যদি মধ্যমার্গে আসিয়া মিশিয়া একেবারে এক হইয়া যায় — তবেই তাহা হয় ’সমরস’; এই ’সমরসে’র বিশুদ্ধ ঊর্ধস্্েরাত; অবধুতিকামার্গকে অবলম্বন করিয়া এই সমরসের ধারা যখন সর্বোর্ধ অবস্থিতি লাভ করে তখনই তাহা পরিশুদ্ধ সামরস্য’ রূপ লাভ করিল। এই পরিশুদ্ধ সামরস্যের পূর্ণতম রূপই হইল সহজানন্দ– তাহাই অদ্বয় বোধিচিত্ত।’’১৫ তন্ত্রের এই সমুন্নত দার্শনিক নাদ-বিন্দুর (শাক্ততান্ত্রিক) তত্ত্ব চর্যাপদে প্রত্যাখাত হয়েছে। সরহ এ বিষয়ে বলেছে–
নাদ ন বিন্দু ন রবি ন শশিমণ্ডল।
চিঅ রাঅ সহাবে মুকল ॥
সরহ।৩২।
কিংবা কঙ্কনের উক্তি–
বিদু নাদ ণ হিএঁ পইঠা।
অণ চাহস্তে আণ বিণঠা ॥
কঙ্কণ।৪৪।
নাদ-বিন্দু নয়, চিত্তের সহজ স্বভাবকে স্ফুতি দিতে হবে। তজ্জন্য চর্যার কবিগণ বৌদ্ধ তন্ত্রানুযায়ী শূন্যতা-করুণা, গ্রাহ্য- গ্রাহক বা ভাবাভাব- এর দ্বন্দ্বত্যাগ করে প্রাণায়াম দ্বারা গঙ্গা- যমুনা ব রবি শশীর মিলেিনর উপায় নির্দেশ করেছেন। শূন্যতা স্বতন্ত্র এবং করুণা পরতন্ত্র বিধায় দেহের বামগা নাড়ী ’স্বর’ বা ’আলি’ (অকারাদিক্রমে তন্ত্রোক্ত বর্ণমালা) এবয় দণিগা নাড়ী ’ব্যঞ্জন” বা কালি (ককারাদিক্রমে তন্ত্রোক্ত বর্ণমালঅ)। এ আলি -কালিই যথাক্রমে গঙ্গা- যমুনা, রবি -শশি প্রভৃতি পরিভাষায় অভিব্যক্ত। মানবদেহের মেরুদণ্ডের দু’পার্শ্বে লম্বিত, ইড়া-পিঙ্গলা নাড়ীদ্বয়ে প্রবাহিত অমৃত ও বিম্বের সাররস্যের সাধনাই চর্যার কবি- সাধকদের স্বাতন্ত্র তান্ত্রিক সাধনা। এর সঙ্গে বৌদ্ধ তন্ত্রেরই নিকট সম্পর্ক বিদ্যমান।
তন্ত্রের সঙ্গে যোগ এর ঘনিষ্ট সংযোগ থাকায় চর্যাপদের কবি – রাও যোগ সাধনার ধারায় গভীরভাবে অনুপ্রাণিত। তাই এসব কবিতায় যোগসাধনার স্পষ্ট নির্দেম বির্ধত। বলাবাহুল্য দেহকে সহজ স্বভাবিক, বিকারহীন অজরামর বা দৃঢ়স্কন্ধ করার জন্যই এসব রচনায় ‘যোগ’ একটি উপায় মাত্র। কিন্তু যোগসাধনাই চর্যার সমগ্র পরিচয় রূপে গ্রহণ করে ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ চর্যাপদ ‘বৌদ্ধ যোগমূলক গীতিক’’১৬ নামে আখ্যায়িত করেছেন। প্রকৃতপক্ েচর্যাপদ বৌদ্ধ যোগমূলক গীতিকা নয়। মহাযানী বৌদ্ধ, যোগসাধনার ধারা,চর্যাপদে অনে উাপাদারে মদ্যে একটি উপাদান বা অন্যতম প্রধান উপাদান মাত্র। একমাত্র উপাদান কিছুতেই নয়। তান এগুলোকে বৌদ্ধ যোগমূলক গীতিকা বা নাথ-গীতি বলা অযৌক্তিক।
প্রথম চজর্যাতেই লুই পা বলেছেন– চঞ্চল চিত্তকে শান্ত করার জন্যই ধমন -চমন বা রেচক-পূরক দুই পিঁড়িতে উপবিষ্ট হয়ে শূন্য সাধনা করা আবশ্যক। কিন্তু একাকী এ- সাধনা সম্ভব নয়। তাই সাধক- কবির সহ -সাধিকার নিকট প্রার্থনা-
তিঅড্ডা চাপী জোইনী দে অঙ্কবালী।
কমল কুলিশ ঘানিট করছ বিআলী ॥
গুণ্ডারী।৪।
বিশুদ্ধ যোগ, নারী -বর্জিত সাধনা। বৌদ্ধ যোগী ও নারী -বজিত সাধক। তন্ত্রে কিন্তু নারী অপরিহার্য। তাই তন্ত্রের মৈথুন ও যোগের প্রাণায়াম -সহযোগে বৌদ্ধ সহজিয়াদের মিথুনাতœক যোগ সাধনার উৎপত্তি। চর্যাপদের সর্বত্র এ মিথুনাতœক যোগসাধনার নির্দেশ বিধৃত। চর্যাগীতি তাই বিশুদ্ধ তান্ত্রিক বা যোগমূলক গীতিকা নয়। এসব গানের রচয়িতাদের সেজন্য ধ্র“পদী বৌদ্ধযোগী রূপে নির্দেশ করা তথ্যসম্মত নয়।
ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ চর্যাপদকে যোগমূলক গীতিকা বললেও চর্যাকারদের তিনি বৌদ্ধ তান্ত্রিক লেখক বলে অভিহিত করেছেন। আবার অন্যত্র বলেছেন–’’ চর্যাপদগুলি বৌদ্ধ সহজ বা বজ্রযানের সিদ্ধাচার্যগণের রচিত মরমী গীতিকা।’’১৭ বস্তুতঃ বজ্রযান ও সহজযান অভিন্ন নয়। বজ্রযান থেকেই সহজযানের উৎপত্তি। ডঃ শশিভূষণ দাশ গুপ্ত বলেছেন– ’’বৌদ্ধ তন্ত্রাদিতে ’সহজযান’ এই নামে বিশেষ সম্প্রদায়ের উল্লেখ আমরা পাইরা। বজ্রযান পন্থী একদল সাধকের কতকগুলি মত- বৈশিষ্ট্য এবং সাধন- বৈশিষ্ট্য ল্য করিয়াই এই নামটি পরবর্তীকালে গড়িয়া তোলা হইেয়াছে বলিয়া মনে হয়। … সহজ স্বরূপকে উপলদ্ধি করিয়া মহাসুখে মগ্ন হইতে হইলেন সহজিয়া । দ্বিতীয়তঃ তাঁতারা সাধনার জন্য কোন বক্র পথ অবলম্বন করিতেন না- গ্রহণ করিতেন সরল সোজা পথ, এই জন্যও তাঁহারা সহজিয়া ।’’৮
’সহজযানী’দের পরিচয় দিতে গিয়ে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী লিখেছেন– ’’সহজযানে গুরুর উপদেশই সব। গুরুর উপদেশ লইয়া মহাপাপ করিলেও মহাপূণ্য হইবে।’’ ১৯ এসব বক্তব্যের পরিপ্রেেিত চর্যাপদ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সহজ সাধনাই চর্যার মূল সাধনা। সহজ ভাবই চর্যাগীতির অবলম্বন। গুরুর হাতেই এ সাধনার চাবিকাঠি। তাই প্রথম চর্যাতেই লুই গুরুর নিকট জিজ্ঞাসা করে সাধনার বিষয় জানতে বলেছেন।
লুই ভণই গুরু পুচ্ছিঅ জাণ।
লুই।১।
এ সাধনার পথে চলতে গেলে কম্বলাম্বরও ’’সদগুরুপুছি’’ যেতে বলেন। সাধনার দাবা খেলায় একমাত্র ’’সদ্ গুরু বোহেঁ-’’ ই ’’ভব্বল’’ বিজয়ী হওয়া সম্ভব (কাহ্ন পা)। ’’সদগুরু পাঅ পসাএঁ’’- ই জিনপুর বা সহজপুর যাওয়া যায় (ডোম্বী পা)। চঞ্চল মূষিক’ চিত্তকে একমাত্র ’’সদগুরু বোহেঁ’’ নিশ্চল করার কথা বলেছেন ভুসুকু। শবর পা ও স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন–
গুরুবাক ধনুআ বিন্ধহ ণিঅ মণে বাণেঁ।
এক সর সন্ধাণেঁ বিন্ধহ পরম নিবাণেঁ ॥
সবর।২৮।
উল্লেখযোগ্য যে, গুরুবাদ তন্ত্রের বিশেষ অবদান। তন্ত্র প্রভাবিত হওয়ায় চর্যাকারদের ধর্ম- দেশনায় ও গুরুর স্থান অতি উচ্চে।
চর্যার কবিরা গুরুর উপদেশে বাঁকা পথ পরিহার করে সোজা পথ বা সহজ পথ অবলম্বনের কথা বলেছেন। কারণ ’’জে জে উজু বাটে গেলা অনাবাটা ভইলা সোই।’’ (শান্তি পাঃ১৫)। সরহের ও নিদের্শ–
উজুরে উজু ছাড়ি মা লেহু রে বাঙ্ক।
নিঅড়ি বোহি মা জাহু রে লাঙ্ক ॥
সরহ।৩২।
চর্যার কবিগণ সর্বত্রই তাঁদের অবলম্বিত পথ কে সোজাপথ (ঋজু বাট) বলেছেন। কিন্তু সোজাপথ বলতে কি বোঝায়? তাঁদের মতে — শাস্ত্র তর্ক পাণ্ডিতের পথ বাঁকা পথ। ধ্যান- ধারণা, সমাধি, তন্ত্র- মন্ত্র, আচার- অনষ্ঠান, পূজা-অর্চনা, ক্রিয়াকাণ্ডের বাহ্যাড়ম্বরযুক্ত পথ- বাঁকা। এসব পরিত্যাগই হোল সোজা পথ- সহজ পথ। তাই শাস্ত্রদ্রোহী বৌদ্ধ সহজিয়াদের তরফ থেকে সরহ বলেছেন–
অক্খর বাঢ়া সঅল জগু ণাহি ণিরক্খর কোই।
তার সে অক্খর ঘোলিআ জাব ণিরকখর হোই ॥
’’সকল জগৎ অরে আবদ্ধ; কেউ নিরর নেই। কিন্তু এসব অর ঘুলিয়ে যাবে যদি কেউ নিরর হতে পাবে।’ সহজ পথের পরিচয় দিতে গিয়ে চর্যার কবি বলেছেন–
ভণ কইসেঁ সহজ বোলবা জায়।
কাঅ বাকচিঅ জসু ণ সমায় ॥
… .. …
জেতই বোলী তেতবি টাল।
গুরু বোব সে সীসা কাল ॥
কাহ্ন ।৪০।
’সহজের কথা (বুঝিয়ে) বালা যায় না। তনুমনবাক্যের তা অতীত। যতই বলা হোক, সবই ব্যর্থ। গুরু (এেেত্র) বোবা এবং শিষ্য বধির।’ কাজেই ’সহজ’, সহজ হয়েও কঠিন। তা মূর্ত্তের মধ্যে অমূর্ত রূপে উপস্থিত। একমাত্র অনুভব দ্বারাই তাকে উপলদ্ধি করা যায়। কবির উক্তি–
অনুভব সহজ মা ভোল রে জোই।
চৌকোড়ি বিমুকা জইসো তইসো হোই ॥
তাড়ক ।৩৭।
চতুষ্কোটি বিনিমুক্ত অবস্থায়ই মাত্র তাঁর স্বরূপ জ্ঞাত হওয়া সম্ভব। সেজন্য নদী পার হওয়াও সাতাঁর জানা আবশ্যক। নৌকায় চড়ে ঘাটে ঘাটে বেড়ালে, কূলে কূলে ঘোরা ভিন্ন – সহজ পারে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই তাড়কের উক্তি–
বাণ্ড কুরুণ্ড সন্তারে জাণী।
বাক পথাতীত কাহিঁ বখাণী ॥
তাড়ক ।৩৭।
’বাণ্ড কুরণ্ড সাঁতার’ বা কাম-সাধনায় সিদ্ধি লাভের দ্বারাই সহজ পারে যাওয়া সম্ভব। সকল চর্যায় নানাভাবে কবিরা ’আমরা বিিেপক’ নিয়মে সে কথাই বলেছেন।
॥৫॥
অতএব চর্যাপদে মিথুুনাতœক দেহবাদী সহজধর্মের কথা অভিব্যক্ত।
সহজভাবে সহজের সাধনাই তাদের মূল সাধনা। কিন্তু যাঁরা এ উপদেশ দিতেন তাঁদের পরিচয় কি? কবিরা নিজেদের ধর্মগোষ্ঠীর কি নাম দিয়েছিলেন তা’ জানতে হলে চর্যাপদ ও দোহাকোষে অনুসন্ধান করা আবশ্যক।
চর্যাপদে কবিরা নিজেদের যোগী- যোগিনী বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু যোগ সাধনাই তাঁদের একমাত্র উদ্দেশ্য না হওয়ায় চর্যার কবিদের বৌদ্ধযোগী বলা যায় না। কোন কোন চর্যায় নাথ শব্দের ও উল্লেখ দেখা যায়। কিন্তু চর্যাকারগণ নাথ নন। কারণ নাথ- সাধনায় নারীর স্থান নেই। পান্তরে, চর্যাপদে নারী সঙ্গী গ্রহণের বার বার ইঙ্গিত বিধৃত। এ সাধনায় সহ- সাধিক্য যে অপরিহার্য তা কবিরা বিশেষ গুরুত্বসহকারে বলেছেন। তাঁদের পরিষ্কার উক্তি–’একমাত্র ডোম্বীর সঙ্গে যে যোগী সাধনায় নরত সে ণমধ্যে সহজ অবস্থায় পৌছে উণ্মত্ত হয়।’’ কাজেই এসব কবি নাথপন্থী নন। কাহ্ন একটি দোঁহায় আরো একটি কথা বলেছেন–
জেঁ কিঅ নিচ্চল মণ-রঅণ ণিঅ ঘরিণী লই এত্থ।
সোহ বাজির নাহু রে ময়ি বুত্ত পরমত্থ ॥
যে নিজের গৃহিনীকে নিয়ে মনরতœ নিশ্চল করতে পেরেছে — সেই বাজির নাথ’ আমি পরমার্থ বলে দিলাম।’’ তিব্বতী অনুবাদ অনুযায়ী সুকুমার সেন কর্তৃক পঁচিশতম চর্যার কল্পিত প্রাচীন পাঠে আছে—
বইঠ ম নিতি (শূণত পাই)।
তন্ত্রী (ছাড়ি বাজিল হোই) ॥
বীণা পাদের সতের সংখ্যক চর্যার শেষ শ্লোকে বলা হয়েছে–
নাচন্তি বাজিল গান্তি দেবী।
বুদ্ধ নাটক বিসমা হোই ॥
’বাজির’ ও ’বাজিল’ — একই শব্দের রূপভেদ মাত্র এবং মূলতঃ শব্দদ্বয় অভিন্ন। দোঁহায় ’বাজির’ হবার নির্দেশ আছে। তাতে বলা হয়েছে– ’বাজির হতে হলে নিজ গৃহিনীর সঙ্গে (কাম-সাধনায়) মন -রতœকে অচঞ্চল করতে হবে। অর্থাৎ কামাতীত হতে হবে। চর্যাকারদের ’বাণ্ডকুরণ্ড সাঁতারের সাধনার সঙ্গে এ সাধনা অপৃথক। অতত্রব, তাঁরাও বাজির। সে স্বীকৃতি সতের, পঁচিশ ও তেত্রিশ -সংখ্যক চর্যায় বিদ্যমান।
শেষোক্ত কবিতায় বলা হয়েছে–
বাজুলে দিল মোহক্খু ভণিতা।
মই অহারিল গঅণত পণিআ ॥
ভাদে।৩৫।
বাজির, বাজিল ও বাজুল একই শব্দের ভিন্ন ভিন্ন রূপ। আর ’বাজুল’ শব্দ থেকেই পরবর্তীকালে ’বাউল’ শব্দের উৎপত্তি। ২০ অতত্রব, চর্যার কবিগোষ্ঠী যে সেকালে ’বাজুল’ বা ’বাজিল’ বলে নিজেদের পরিচয় দিতেন– সেকথা স্বীকার্য। চর্যাগীতিসমূহ এই বাজিল, বাজুল বা বাউলদের -ই গান। পরবর্তীকালে বাউলদের থেকে স্বতন্ত্রভাবে চিহ্নিত করার জন্য, চর্যার কবিদের বৌদ্ধ সহজিয়া বাউল বলা উচিত। আর তাঁদের গান–চর্যাপদ, বৌদ্ধ সহজিয়া বাউলগান।
তথ্য নির্দেশ
১. চারুচন্দ্র বসু অনুদিত ধম্মপদ, কলিকাতা, ১৯০৪, পৃ.১৫৪
২. ঐ, পৃ.১৬০
৩. ঐ, পৃ. ২০৭
৪. ঐ, পৃ. ২০৬
৫. শিবচন্দ্র লাহিড়, চর্যপদের অলংকারে ভারতীয় উজান সাধনার ঐতিহ্য, প্রবন্ধ পত্রিকা, কার্তিক, ১৩৬৯, পৃ. ৭৬
৬. হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, বৌদ্ধ- হীনযান ও মহাযান, প্রবাসী, শ্রাবণ -১৩২২, পৃ. ৫৪৫।
৭. ড. সুকুমার সেন, চর্যাগীতিপদবলী, বর্ধমান -১৯৫৬, পৃ. ২৯-৩০
৮. ঈশান চন্দ্র ঘোষ, জাতক মঞ্জরী, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৩৪, পৃ. উপক্রমিকা
৯. ড.শশিভূষণ দাশগুপ্ত, বৌদ্ধ ধর্ম ও চর্যাগীতি, কলিকাতা, ২য় সংস্করণ, ১৩৭১, পৃ. ১৫
১০. ড. শশিভূষণ দাসগুপ্ত, পুর্বোক্ত, পৃ. ৪২
১১. ঐ,পৃ. ৫৪
১২. J. finigen, the Archeology of World  Religions, New Jersey-1952, P.246
১৩. শিব চন্দ্র লাহিড়ী, পুর্বোক্ত, পৃ. ৬৪
১৪. ঐ, পৃ. ৯১
১৫. ড. শশিভুষণ দাসগুপ্ত, পূর্বোক্ত, পৃ. ৯৫-৯৬
১৬. ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, বাংলা সাহিত্যের কথা, ১ম খণ্ড, ঢাকা, ১৯৬০,পৃ.৪৭
১৭. ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, পুর্বোক্ত, পৃ.৭৪
১৮. ড.শশিভুষণ দাশগুপ্ত , পূর্বোক্ত, পৃ. ৮৮
১৯. হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, বৌদ্ধ ধর্ম, প্রবাসী, পৌষ, ১৩২১,পৃ.৩৫৫
২০. দৃষ্টব্য, এস, এম, লূৎফর রহমান, বাউল শব্দের উৎপত্তি ও ব্যাখ্যা, সাহিত্য পত্রিকা, শীত, ১৩৭৬, পৃ. ১২৯, এবং ড. আহমদ শরীফ, স্বদেশ অন্বেষা, ঢাকা, ১৩৭৭, পৃ. ১৪৭
তথ্যসূত্র  http://nirvanapeace.com