Tuesday, December 3, 2013

0 বিশ্বমানব বুদ্ধ গুণে মুগ্ধ রবীন্দ্রনাথ

বুদ্ধদেব নামের গ্রন্থটি মূলত কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিভিন্ন সময়ে বুদ্ধকে নিয়ে লেখার সংকলন, বইটির প্রথম লাইন হচ্ছে- আমি যাকে অন্তরের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ মানব বলে উপলব্ধি করি আজ এই বৈশাখী পূর্ণিমায় তার জন্মোৎসবে আমার প্রণাম নিবেদন করতে এসেছি।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্বমানবের অনন্য উচ্চতায় আরোহণকারী গৌতম বুদ্ধের বন্দনায় মেতে উঠে আরো লিখেছেন- তিনি তার সব-কিছু ত্যাগ করেছিলেন দীনতম মূর্খতম মানুষেরও জন্য। তার সেই তপস্যার মধ্যে ছিল নির্বিচারে সকল দেশের সকল মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা।

এভাবে বিশ্বকবি তার ঐন্দ্রজালিক ভাষায় উচ্ছসিত উপমা আর মুগ্ধতার জাল বুনেই থেমে যান নি বরং রীতিমত যুক্তির কষ্টিপাথর দিয়ে যাচাই করে দেখিয়েছেন কেন বুদ্ধকে বিশ্বমানব বলা হয় এবং কেন তাঁর বাণী সর্বজনগ্রাহ্য হবে। বিশেষ করে কবি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেছেন বারংবার সেই ভেদাভেদমুক্ত সাম্যবাদী সমাজ ব্যবস্থার প্রচলনের চেষ্টার, উল্লেখ করেছেন বুদ্ধের আবির্ভাবে- সত্যের বন্যায় বর্ণের বেড়া দিলে ভাসিয়ে।

বিশ্বের সব মানুষ যে সমান, বহু যুগ ধরে চলতে থাকা জাত-পাত, ভেদাভেদ যে কেবল শোষণকারী একটা সমাজের কুৎসিত চক্রান্ত তার বিরুদ্ধেই যেন মহাস্ত্র হয়ে এল বুদ্ধের দর্শন। বাসেট্ঠ সূত্রে বুদ্ধ দেশনা করেছেন- “জাতি হিসেবে মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ নেই। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্রের পদচিহ্ন একই রূপ। হাতি, ঘোড়া, বাঘ এরূপ চতুষ্পদ প্রাণীদের মতো মানুষে মানুষে দৈহিক গঠনে কোনো পার্থক্য দেখা যায় না”।

বুদ্ধের সম্পর্কে কবি গুরু আরো লিখেছেন- এত বড় রাজা কি জগতে আর কোনোদিন দেখা দিয়েছে! বর্ণে বর্ণে, জাতিতে জাতিতে, অপবিত্র ভেদবুদ্ধির নিষ্ঠুর মূঢ়তা ধর্মের নামে আজ রক্তে পঙ্কিল করে তুলেছে এই ধরাতল, পরস্পর হিংসার চেয়ে সাংঘাতিক পরস্পর ঘৃণার মানুষ এখানে পদে পদে অপমানিত। সর্বজীবে মৈত্রীকে যিনি মুক্তির পথ বলে ঘোষণা করেছিলেন সেই তারই বাণীকে আজ উৎকণ্ঠিত হয়ে কামনা করি এই ভাতৃ বিদ্বেষ কলুষিত হতভাগ্য দেশে।


(রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বুদ্ধদেব গ্রন্থ হতে)
 

0 comments:

Post a Comment